জামায়াতনেতা এটিএম আজহার খালাস, মুক্তিতে বাধা নেই
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতনেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি আপিল বিভাগে খালাস পেলেন।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে পিনপতন পরিবেশে ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করে এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে এটিএম আজহারের কারামুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
রায়ের পর এটিএম আজহারের আইনজীবী শিশির মনির জানান, শেখ হাসিনার আক্রোশ ও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। আজকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এ রায়ের পর কারা মুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
এ রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াতসহ সারাদেশের মানুষের চোখ ছিল উচ্চ আদালতের দিকে।
আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সাজা দিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়। দেশের পট পরিবর্তনের পর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এটিএম আজহারের রায় ঘিরে সবার কৌতূহল ছিল।
জামায়াত-বিএনপির ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করে শেখ হাসিনা
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় রিভিউতে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন।
শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এর আগে গত ৮ মে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেন। শুনানিতে অংশ নেন এটিএম আজহারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।
গত ৬ মে এ টি এম আজহারের আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান এটিএম আজহার। এ ছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে একই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন এই জামায়াতনেতা। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার ওই আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।