রাজধানীর রমনায় জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে এমটিবি ময়মনসিংহ বিভাগীয় টেনিস প্রতিযোগিতা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগনেতার উপস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহে। তবে প্রশাসন বলছে, আওয়ামী লীগনেতা এই অনুষ্ঠানে কীভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন তা তারা জানেন না। 

আজ শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল ৫টায় রমনায় জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে  এ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ও ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। ময়মনসিংহ বিভাগীয় টেনিস টুর্নামেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ময়মনসিংহ ক্লাবের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও গণমাধ্যমকর্মীরাও। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) এই খেলাটির স্পন্সর। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্ক্রিনে অন্য অতিথিদের সঙ্গে ভেসে ওঠে আওয়ামী লীগনেতা ফারুক খান পাঠানের ছবিও। স্ক্রিনে গাড় নীল রঙের ফুল শার্ট, মাথায় ক্যাপ ও চোখে চশমা পরা অবস্থায় তাকে দেখা যায়। প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায়, বেলুন উড়িয়ে খেলা উদ্বোধনের সময় তিনি এগিয়ে গিয়ে উপদেষ্টার পাশে দাঁড়ান। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ময়মনসিংহ ক্লাবের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম মাহাবুবুল আলম, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুলসহ রাজনীতিক, ক্রীড়ামোদি, সাংবাদিক, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্ক্রিনে এই চিত্র দেখেন। 

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আবু ওয়াহাব আকন্দ। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টার পাশে একজন আওয়ামী লীগনেতা দাঁড়িয়ে আছেন। এটি কীভাবে সম্ভব?’  

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ক্রীড়া সংগঠক এ কে এম মাহাবুবুল আলমও। তিনি বলেন, ‘ওই আওয়ামী লীগনেতা বিগত ১৫ বছর টেনিস, ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছেন। আজ দেখলাম তিনি স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশেও দাপটের সঙ্গে উপদেষ্টার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বিষয়টি জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী। এই আওয়ামী লীগনেতা কীভাবে উপদেষ্টার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’ 

স্থানীয় সূত্র জানায়, ফারুক খান পাঠান জেলা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য, তিনি ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে বিনাভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান পলাতক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানের ভাতিজা। বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব বিস্তার, দলীয়করণের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। 

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ ক্লাবের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ফারুক খান পাঠান ময়মনসিংহ ক্লাব ও টেনিস ফেডারেশনের সদস্য। বিগত সময়ে তিনি ক্রীড়া সংগঠনগুলোতে সক্রিয় ছিলেন। তবে এখন তিনি কীভাবে উপদেষ্টার সঙ্গে টেনিসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গেলেন, তা জানা নেই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘কিছুদিন আগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি তাকে সঙ্গে করে আমার অফিসে আসেন। নিয়মিত তার সঙ্গে টেনিস ফেডারেশন যোগযোগ রাখছিল। আমি তার রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। তবে আজ অনুষ্ঠানের পর তার রাজনৈতিক পরিচয় জানতে পেরেছি। তিনি কীভাবে উপদেষ্টার অনুষ্ঠানে গেলেন, তা আমার জানা নেই।’

এমটিবি ময়মনসিংহ বিভাগীয় টেনিস প্রতিযোগিতার সিনিয়র ও উন্মুক্ত ইভেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ জুন সকাল ৮টা থেকে উন্মুক্ত ইভেন্টের খেলা জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স, রমনায় এবং সিনিয়র ইভেন্টের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহ ক্লাবে।