সম্পূরক শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বারোপ আমীর খসরুর

বাংলাদেশি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে আমরা আজকে শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিশেষ করে রপ্তানিকারক বড় বড় শিল্পপতি যারা জড়িত আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিজনেস লিডার যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মতামত শুনেছি, তারা (শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা) সবাই মনে করছেন, এই নেগোসিয়েশনটাকে শক্তিশালী করতে হবে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে ধরে অনেকগুলো বিষয় আছে, এখানে ইন্ডাস্ট্রির একটি বিষয় আছে, গার্মেন্টস সেক্টর একটা বড় বিষয় আছে, অ্যামপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি বিষয় আছে, এখানে নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় চলে আসছে এবং সেখানে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের একটা বিষয় আছে, সেই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। আমরা আশা করছি, দেশের স্বার্থে, আমাদের দেশের আগামী দিনের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান অনেক কিছু জড়িত। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে একটা সুষ্ঠু সমাধান দরকার।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে চেষ্টা করব উনাদের (ব্যবসায়ীদের) মতামতগুলোসহ আমাদের বিষয়টা সরকারকে জানাতে। এখানে মনে রাখতে হবে, সমন্বিত একটা বিষয় আছে। আসলে বিষয়টা এককভাবে কিছু করার বিষয় নয়, সমন্বিতভাবে চেষ্টা করতে হবে, যাতে এ থেকে আমাদের অর্জন করা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।’
গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে তারা ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এরপর থেকে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনায় বসে।
বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ভারতও চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে। সেজন্য আলোচনাও চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শেষে দেশে ফিরে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বসিরউদ্দিন বলেন, ‘আলোচনা ইতিবাচক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়ে গেছে। সেগুলো আলোচনা করে অতি দ্রুত তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত যাচ্ছি। আশা করছি, আল্লাহর রহমতে ভালো ফল আসবে।’
সরকারের আলোচনার মধ্যে ব্যবসায়িক নেতারা আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল সেরিনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। এতে ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ কে আজাদ ও সিমিন রহমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, বিজেএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, লেদার গুডস অ্যান্ড মেন্যুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নিজাম মনসুর, সিরামিক মেন্যুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ জাব্বার, বাংলাদেশে টেরি টাওয়াল অ্যান্ড লেলিন মেন্যুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন ছিলেন।
আমীর খসরুর সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাসভীরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন ছিলেন।
‘বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়বে’ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, টোটাল এক্সপোর্টের একটা বিশাল অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গার্মেন্টসের একটা বিশাল অংশ যায়। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যে যায় তার সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫-১৬ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আট বিলিয়ন ডলার রপ্তানি নয়, এটার সঙ্গে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সস্পৃক্ত।
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টারে সঙ্গে আরও অনেক খাত জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের সঙ্গে আমাদের রপ্তানির পণ্যে যেটা যুক্তরাষ্ট্রে হয়, এর একটা বিশেষ অবদান রয়েছে এটা আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এটার সমাধান যদি সঠিকভাবে করতে না পারি, তাহলে আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত সবাই অ্যাফেক্টেড হবে।’