রড ভেঙে মেয়েকে বের করে আনার বর্ণনা দিলেন বাবা
‘বলার কোনো ভাষা নেই। নিজের চোখে নিজের বাচ্চাটা আগুনে পুড়তে দেখেছি। শুধু আমরা বাচ্চা না, অনেক অনেক বাচ্চা—শুধু বাঁচাও বাঁচাও বলতেছিল’, কথাগুলো বলছিলেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়ার বাবা আব্দুর রহিম।
উত্তরা ১২নং সেক্টরের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, তার মেয়ে সামিয়া হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে রয়েছে।
আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহিম। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির দোতলায় আটকে পড়েছিল তার মেয়ে সামিয়া, যাকে তিনি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছেন। তার আরেক ছেলে সিয়াম একই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আব্দুর রহিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি স্কুলে গিয়েছি, আমার বাচ্চাকে আনতে। দুপুর ১টা বাজে ছুটি হয়, আমি পৌঁছেছি ১টা ৪ মিনিটে। এরপর আমার বড় ছেলে ফোন দিয়ে বলল—ওর (সামিয়া) ছুটি ২টায়। এ কথা শুনে আমি গেট থেকে সরেছি, এর মধ্যেই ওই প্লেনটা এলো। প্লেনটা এসেই ভবনের উপর পড়ল। তখন শুধু একটা বিকট শব্দ শুনেছি। এরপরই দেখি, আগুন। তখনতো আমি পাগল হয়ে গেছি, আমার মেয়ের জন্য। আমার মেয়ের আগে অনেক মেয়ে বের হলো। আমার মেয়ে ছিল দোতলায়। ও ফোরে পড়ে। ওর নাম সামিয়া। ও এখন মেডিকেলে আইসিইউতে আছে। তার পরিস্থিতি এখন আল্লাহর হাতে। ডাক্তার আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। নিজের চোখে আমার নিজের মেয়েকে পুড়তে দেখলাম। অনেক কষ্ট হয়েছে বাবা হিসেবে। আমি নিজে আমার মেয়েকে ভবনের রড ভেঙে বের করেছি।’
আব্দুর রহিম আরও বলেন, ‘আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম—কীভাবে তাকে বের করব। ভবনের দোতলা থেকে একা বের করতে পারছিলাম না, এরপর আর্মি ও আরও কয়েকজন এসে সবাই রড ভেঙে বের করে এনেছি। আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। যখন আমি তাকে নিয়ে নিচে এলাম, তখন দেখি সে পড়ে গেছে। আমি আবার পাগল হয়ে যাই। পরে আত্মীয় স্বজনদের ফোন দিয়ে আনি। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানে আরও করুণ অবস্থা। এত রোগী, ডাক্তাররা পেরে উঠছেন না। অনেক রোগী, অনেক বাচ্চা।’
‘আমার মেয়ের হাত-পা-কান ও গলা পুড়ে গেছে। আমার মেয়ের অনেক কষ্ট হইতেছে। দোয়া করবেন’, যোগ করেন এই অভিভাবক।