বেগুন গাছে টমেটো চাষে বাম্পার ফলন

শরতের নীল আকাশ। ওপরে সাদা মেঘের দলা উড়ে যায়। কাঠফাঠা রোদের মাঝে ফুরফুরে বাতাস বইছে। মাঠ থেকে আসছে কাঁদা মাটির ঘ্রাণ। ধানী জমির মাঝে বিস্তৃত এলাকা পলিথিনের শেড। ভেতরে আইল করে লাগানো টমেটো গাছ। গাছের ডগায় থরে বিথরে ঝুলে আছে লাল সবুজ টমাটো। পাখি পোকামাকড় থেকে পাকা টমেটো রক্ষায় জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া। এমন দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার কোরপাই গ্রামে। এই গ্রামের কৃষক মো. মোবারক হোসেন জংলি বেগুনের সঙ্গে গ্রাফটিং করে টমাটো চাষে কোটিপতি হয়েছেন।
কুমিল্লা কৃষি অফিস জানায়, পথের পাশে কিংবা ঝোপের মধ্যে জন্ম হয় জংলী বেগুনের। সেই ফেলনা বেগুনের চারার সঙ্গে টমেটোর চারার জোড়া (গ্রাফটিং) লাগিয়ে জন্ম নেওয়া চারা রোপণ করেন মোবারক হোসেন। বছর চারেক আগে তার এই কাজ দেখে অনেকেই পাগল বলে আখ্যায়িত করেছিল। এখন সমালোচকরাই টমেটোর চারা তৈরি ও চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে তিন একর জমিতে গ্রাফটিং করা টমেটার চাষ করা হয়েছে। ওপরে পলিথিনের শেড দেওয়া। পলিথিনের ওপর সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে। জনা দশেক পুরুষ ও নারী টমাটোর জমি পরিচর্যা করছেন। জমিতে লাগানো হয়েছে জৈব বালাইনাশক হলুদ ট্র্যাপ। গ্রীষ্মকালীন টমেটো পরিপক্ক হওয়ার পর বিক্রি শুরু হয়েছে। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি ধরে।
মোবারক হোসেন জানান, বছর চারেক আগে পথের পাশে জন্মানো জংলী বেগুনোর সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং করে শুরু করি। আমার বাড়িতে এখন চারা তৈরি শেডে গ্রাফটিং করা হয়। শুধু তাই নয়, এক দশক ধরে তিনি ফসল উৎপাদন, মাছ চাষ ও গরু পালন করছেন। গত চার বছর ধরে তিনি জংলি বেগুনের সঙ্গে টমোটোর জোড়া লাগিয়ে চারা তৈরি করছেন। প্রতিটি চারা পাইকারি ১৫ টাকা করে বিক্রি করেন। এভাবে ছয় লাখ চারা বিক্রি করেছেন। মাঠে সাড়ে তিন একর জমিতে সাহু ও কানসাল জাতের টমেটা লাগিয়েছেন। চারা, মাচা, মালচিং, সার ও শ্রমিক মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ লাখ টাকার মতো। তিনি আশা করছেন বিক্রি অর্ধ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া তিনি শীতকালীন আগাম টমেটো চাষের জন্য মঙ্গল রাজা নামের টমেটোর চারার গ্রাফটিং করছেন। সেগুলো আরও সাড়ে তিন একর জমিতে চাষ করবেন।
মোবারকের নির্দেশে চারা গাছের কাজ করেন জাহিদ হোসেন। জাহিদ জানান, তিনি রাতে সাধারণত জংলি বেগুনের সঙ্গে টমেটোর চারা জোড়া লাগানোর কাজটি করেন। মিনিটে তিন থেকে চারটি চারা জোড়া দেন। এক রাতে ১৮শ’ থেকে দুই হাজার চারা তৈরি করেন। আবুল হোসেন বলেন, গ্রাফিটিংয়ের চারার আয়ু অন্য চারার থেকে বেশী। পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় প্রাকৃতিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাই মোবারক হোসেনের টমাটো শরীরের জন্য উপকারি।
মোবারক হোসেনসহ ওই এলাকার কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সব রকমের পরামর্শ ও সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মদ ভুইয়া। তিনি বলেন, কৃষক মোবারক বেশ উদ্যমী। তাই তার জমিতে এখন ফসল হাসছে।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, আমরা উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করছি। তাদের একজন মোবারক হোসেন। তিনি টমেটোর গ্রাফটিং করে সাড়া ফেলেছেন। তার চারা বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছে। তার থেকে কৃষি বিভাগও ৭০ হাজার টাকার চারা কিনেছে। এছাড়া তার টমেটোর মাঠে আমরা বিষমুক্ত উপায়ে চাষের জন্য জৈব বালাইনাশক সরবরাহ করেছি।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি টমেটো যেন গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায়। সে চেষ্টায় আমরা সফল। তবে এ যাত্রায় আমরা এখন গ্রীষ্মকালীন টমাটো অধিক চাষে মনোযোগী হচ্ছি। যাতে করে মোবারকের মত অন্যরাও এগিয়ে আসে। তাতে সাশ্রয়ীমূল্য সারা বছর ধরে টমেটোর স্বাদ নিতে পারবে এ জনপদের মানুষজন। সে
লক্ষ্যে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছি। এ ছাড়া কৃষকরা টমাটো চাষে এগিয়ে এলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সব রকমের সহযোগিতা করবে।