বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের প্রতিটি বাঁকে মরণফাঁদ

ভোরের আলো ফুটতেই উত্তরাঞ্চলগামী ট্রাক, বাস ও প্রাইভেটকারগুলো নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক ধরে ছুটে চলে। সোনা মসজিদ, হিলি স্থলবন্দর কিংবা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র- এই সড়ক দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি। তবে যাত্রীদের কাছে এটি শুধু যাতায়াতের পথ নয়, পরিণত হয়েছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ‘মরণপথ’।
২০১৪ সালের বড়াইগ্রামের রেজুর মোড়ে এক ভুল ওভারটেকিংয়ে ঝরে যায় ৩৮ প্রাণ, আহত হন অন্তত ২৫ জন। আজও সেখানে স্থানীয়রা শোনান কাতর আর্তনাদ, ‘ওই দিন আমার বাবাকে হারাইছি’, ‘আমার স্বামী আর ফেরেনি।’
বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মহাসড়কে ঘটেছে ১১৪টি দুর্ঘটনা। নিহত হয়েছেন ৩৪ জন, আহত ১২৪ জন। প্রতিটি সংখ্যা যেন একটি পরিবারের ভাঙার গল্প।
মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫টি বাঁক রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো ভারী যান চললেও রাস্তার প্রস্থ সীমিত, এবং দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের ওভারটেকিং ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল করিম বলেন, মূল সড়কে চলাচলরত তিন চাকার যানবাহন দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। খানা-খন্দও দুর্ঘটনার কারণ।
২০১৪ সালের দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়া আজিজুর রহমান জানান, অর্থের অভাবে চিকিৎসা চালানো সম্ভব হয়নি। এখন পঙ্গুত্ব নিয়েই বেঁচে আছি। চাই, এই সড়ক নিরাপদ হোক।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন জানান, হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার তাইজুল ইসলাম বলেন, সড়কটি ফোর লেন এবং মাঝখানে ডিভাইডার থাকা জরুরি, তবেই দুর্ঘটনা কমবে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় আহতদের সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, দ্রুতগতির গাড়ি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে ওভারটেকিংই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
নাটোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কটি দেশের প্রথম সার্ভিস লেনযুক্ত সড়ক হলেও প্রশস্ত করার উদ্যোগ জরুরি। সরকারের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ফোর লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশে তাৎক্ষণিক মেরামতের কাজও হবে।