তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড শুনানিতে যা হলো

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক এই আদেশ দেন।
ঢাকার সিএমএম আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান দুপুরে তৌহিদ আফ্রিদিকে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। এরপর বিকেল ৩টা ২৬ মিনিটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। তাকে তোলার পরে এজলাসে হট্টগোল শুরু হয়। এছাড়া তাকে দেখতে আদালতের অনেক স্টাফ ও আইনজীবী এজালসে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের বিচারক আসন গ্রহণের পরে তৌহিদ আফ্রিদির আইনজীবী খায়রুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল পূবর্ক জামিনের আবেদন করেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে জানান, মাননীয় আদালত মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাদীর অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিকটিম নিহত হন। এখানে আসামির কোনো ভূমিকা নেই।
আইনজীবী বলেন, গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দিয়ে বলেছেন তথ্যগত ভুলের কারণে তার নাম যোগ হয়েছে। তাকে এ মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোনো বাধা নেই। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তিনি আরও বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত হাঁটা-চলা করলে তার প্রস্রাবে ব্লাড আসে। এছাড়া তার ওয়াইফ (স্ত্রী) প্রেগন্যান্ট। মানবিক বিবেচনায় তার জামিন দেওয়া হোক।
আইনজীবী বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে তার একাধিক পোস্ট আছে। এ সময় এজলাসে ফের হট্টগোল শুরু হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর ছবি আদালতকে দেখান। ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, আসামির আলাদা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি নেই।
আইনজীবী আরও বলেন, আফ্রিদির কিডনিতে জটিলতা আছে। আদালতে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা চাচ্ছি।
রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি মামলায় এজাহারভুক্ত। তাকে মিডিয়া সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কার কী নির্দেশনা ছিল। কারা অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা। এই আসামি ডিবির হারুনের সঙ্গে একাধিক লাইভ করেছেন। এ সময় তারা আফ্রিদির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। কাঠগড়ার লোহার রেলিংয়ে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনানি শোনেন আফ্রিদি। এরপরে আদালত তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
গতকাল রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে তৌহিদ আফ্রিদিকে সিআইডির একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিদের ছোড়া গুলি আসাদুলের বুকে ও ডান পাশে লাগে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নাম্বার এজাহারনামীয় আসামি।