বিদেশ ফেলে দেশে মাল্টা চাষে সফল লক্ষ্মীপুরের আজিম

জীবিকার তাগিদে ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা গ্রামের আজিম হোসেন। সেখানে চার বছর মাল্টা বাগানে কাজ করে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ নেন। তবে প্রবাস জীবনের একাকিত্ব তাকে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। দেশে ফিরে ছোট ভাই মোক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৭ সালে ৮ একর জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন মাল্টা চাষ।
শুরুতে কিছু গাছ মারা গেলেও এখন তাদের বাগানে এক হাজারের বেশি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ৫০ কেজি করে মাল্টা ধরে। ২০২০ সাল থেকে ফল আসতে শুরু করে। প্রথমে লোকসান হলেও ২০২২ সাল থেকে লাভ হয়। আর ২০২৪ সালে তারা আয় করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাদের ‘ভুঁইয়া ফ্রুটস ফার্ম’ থেকে উৎপাদিত মাল্টা পাইকারি দরে কেজি প্রতি ৮০-১২০ টাকা দামে বিক্রি হয়।
আজিম হোসেন জানান, গত বছর মাল্টা বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। মাল্টা চাষে তাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। এখন আর জীবিকার জন্য কারও চাকরি করতে হয় না। ফিরে এসে ছোট ভাই মোক্তারকে সঙ্গে নিয়েই শুরু করেন মাল্টার চাষ। মাল্টা চাষ করে দুই ভাই এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি তারা গ্রামের অন্যদের মাল্টা চাষ করার জন্য উৎসাহিত করছেন।
মোক্তার হোসেন বলেন, প্রথমদিকে মাল্টা চাষের সফলতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সংশয় এবং সন্দেহ দেখা দিলেও পরবর্তী সময়ে আমাদের সফলতায় সবাই খুশি। মাল্টা চাষে উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পানির অভাব দূর করার জন্য আমাদের বাগানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি শ্যালো পাম্প মেশিন স্থাপন করে দিয়েছে। ফলে এখন আর শুকনো মৌসুমে পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।
মোক্তার হোসেন আরও বলেন, বাগানের ফল থেকে কলম ও চারা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। আগ্রহী চাষিদের কাছে মাল্টা ফলের কলম ও চারা বিক্রি করে তাদের মাল্টা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। যুবকদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারা প্রতিটি কলম ১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করে থাকেন। এরই মধ্যে কয়েকজন যুবক তাদের কাছ থেকে কলম সংগ্রহ করে বাগান তৈরি করেছেন।
লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনীর ফল ব্যবসায়ী জহির বলেন, লক্ষ্মীপুরের উৎপাদিত মাল্টা ফলের রঙ আমদানি করা ফলের তুলনায় কম হলুদ হওয়ায় প্রথমদিকে মানুষ কিনতে আগ্রহী ছিলেন না। অনেকের ধারণা ছিল ফল টক হবে, স্বাদ হবে না। ক্রেতাদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে বিক্রি করতাম। এখন অধিকাংশ ক্রেতাই এসে লক্ষ্মীপুরের মাল্টার খোঁজ করেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মোহাম্মদ সামছুদ্দিনি ফিরোজ বলেন, আজিম ও মোক্তারকে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্য কেউ এই মাল্টা ফল চাষ করতে আগ্রহী হলে তাদেরও কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।