মিথ্যা তথ্যে জয়-পুতুল প্লট বাগিয়ে নেন, সহায়তা করেন শেখ হাসিনা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলায় আরও ছয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে এই সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর খান মো. মঈনুল হাসান লিপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ আদালতে ছয়জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় জেরা করা সম্ভব হয়নি। বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
দুদকের পিপি খান মো. মঈনুল হাসান লিপন বলেন, এ মামলার সাক্ষীরা হলেন—সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার গৌতম কুমার সিকদার, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম, কর সার্কেল প্রধান সহকারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, কর সার্কেল কম্পিউটার অপারেটর মো. রেজাউল হক, কর সার্কেল নোটিশ সার্ভার মো. আবু তাহের ও অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন।
পিপি বলেন, সাক্ষীরা তাদের জবানবন্দিতে বলেন—রাজউক অঞ্চলে প্লট পেতে গেলে সংস্থাটির আইনে আবেদনকারীকে একটা হলফনামা দিতে হয়। এই হলফনামায় উল্লেখ করতে হয়, আবেদনকারীর নিজের নামে, রক্তের বা নিকটাত্মীয় কারও নামে ফ্ল্যাট, প্লট রাজধানীর বুকে থাকতে পারবে না।
খান মো. মঈনুল হাসান লিপন বলেন, শেখ হাসিনার পুত্র জয় ও মেয়ে পুতুল হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, রাজউকের এরিয়া নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার কোথাও তাদের নামে, আত্মীয়র নামে বাড়ি বা সম্পত্তি নেই। এটা উল্লেখ করে তারা হলফনামা দেন।
পিপি আরও বলেন, হলফনামায় উল্লেখ আছে—রাজধানীতে যদি আবেদনকারীর আত্মীয়-স্বজন, রক্তের সম্পর্কের কারও বাড়ি থাকে, তাহলে সে প্লট পাবে না। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা (জয়-পুতুল) পূর্বাচলের প্লট বাগিয়ে নেন। আর এতে সহযোগিতা করেন তাদের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই আইনজীবী বলেন, ‘তাদের (জয়-পুতুল) আয়করের তথ্যেও গড়মিল আছে। তাই আয় বর্হিভূত অর্থ দিয়ে যদি প্লট কেনা হয়, তাহলেও তো তারা অপরাধী হবেন।’
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠন শুনানির সময়ে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পৃথক মামলাগুলোর একটিতে শেখ রেহানা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন, আরেকটিতে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন এবং অপর মামলায় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২০ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ আদালতে তিনটি করে মোট ছয়টি মামলা বিচারের জন্য পাঠানো হয়।
মামলাগুলোতে অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।