শিশুদের কলকাকলিতে মুখর বাণিজ্যমেলার পার্ক
সরকারি ছুটি থাকায় গতকালের মতো আজ শনিবারও (২৫ জানুয়ারি) ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে ঢল নামে সব বয়সী মানুষের। এদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে জমে ওঠে মেলার শিশু পার্ক, প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ শনিবার বেলা ১১টার পর থেকেই মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ বাড়তে থাকে। এতে বেলা ১২টার পরেই মানুষে ঢল নামে। এতে মেলার প্রতিটা প্রাঙ্গণ পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে পড়ে মেলার মিনি শিশু পার্ক। এছাড়া কসমেটিক, কাপড়সহ খাবার প্যাভিলিয়ন-স্টলগুলোতে মানুষের ভিড় বেশি ছিল।
দেখা যায়, মেলায় যাদের সঙ্গে শিশু-কিশোর রয়েছে, তাদের ভিড় বেশি মিনি শিশু পার্কে। এখানে মিউজিকের তালে তালে হেসে খেলে মেতে উঠছে তারা। এতে খুশি অভিভাবকরাও। পার্কে শিশুদের পছন্দের সেরায় ছিল ঘোড়া, নৌকা, ট্রেনসহ হেলিকপ্টার। কিশোরদের পছন্দের সেরাতে চরকি, মিউজিক নৌকাসহ নাগরদোলা। হই হুল্লোড় আর উচ্ছ্বাসে প্রাণবন্ত মেলার এই শিশু পার্ক।
মেলায় মিনি শিশু পার্কের ট্রেন-হেলিকপ্টারে চড়বে শিশু তন্বী, আবদার পূরণে সঙ্গ দিচ্ছে শিশুটির মা ও বাবা। তন্বীর মা ডালিয়া চৌধুরী বলেন, মেলায় শিশু পার্ক দেখেই ট্রেন ও হেলিকপ্টার উঠতে বায়না করছে মেয়ে। তার খুশিতে আমিও খুশি। মেয়েটির বাবা জামিল হোসাইন বলেন, শিশু পার্কের ট্রেন-হেলিকপ্টারে চড়ে মেয়ে বেশ খুশি।
শিশু পার্কের বিভিন্ন রাইডসে চড়তে পেরে হেসে লুটোপুটি শিশু আবিদ। তিনি বলেন, ঘোড়া, নৌকা, ট্রেন, হেলিকপ্টার ও চরকিতে চড়েছি। অনেক মজা পেয়েছি। আবিদের মা হুমাইরা আহমেদ বলেন, দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি পার্কে। ছেলে একটার পর একটা রাইডসে চড়ছে। আমি ছেলেকে সঙ্গ দিচ্ছি, আর ওর আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখছি।
দুই বন্ধু নিয়ে ধানমণ্ডি থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন জাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় বাণিজ্য মেলায় এসেছি। তখন লোক কম ছিল। কিন্তু বেলা ১২টার পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। এখন বিকেল ৫টা বাজে, মানুষের ভিড় প্রচুর। তিনি বলেন, বাসার জন্য বিছানার চাদর কিনেছি। ছেলে ও মেয়ের জন্য কিনেছি জামা কাপড়। বন্ধুরাও কিনেছে তাদের পছন্দ মতো কাপড়।
জাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তিন বন্ধু মিলে দুপুরে এখানেই বিরিয়ানি খেয়েছি। খাওয়ার সময় দোকান মালিকরা বলেছে, এটা হাজী বিরিয়ানি। কিন্তু খাবারের পর মনে হচ্ছে, দোকান মালিকরা মিথ্যা বলেছে। কারণ আমার অফিস মতিঝিলে। আমি প্রায় হাজী বিরিয়ানি খাচ্ছি। মেলার হাজী বিরিয়ানি সাথে মতিঝিলের হাজী বিরিয়ানির স্বাদ পুরো ভিন্ন। খেতেও অন্যরকম।
নর্দ্দার আজিজ সড়ক থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন নরেন, সঙ্গে রয়েছে মামাতো ভাইবোন। নরেন বলেন, বাণিজ্যমেলায় এসেছি দুপুর আড়াইটায়। মেলায় প্রবেশের সময় লাইন ধরতে হয়। ভিড়ের কারণে মেলায় ঢুকতে কষ্ট হয়। তিনি বলেন, মেলা থেকে কিছু কসমেটিকস কিনেছি। মামাতো বোনকেও কসমেটিকস কিনে দিয়েছি। তিন ভাই-বোন মেলায় অনেক খেয়েছি। মজা করেছি।
এদিক, বাণিজ্যমেলা শেষ হতে বাকি আর ছয়দিন, সময় ঘনিয়ে আসছে, আর মেলায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে জানিয়ে প্যাভিলিয়ন-স্টলগুলোর বিক্রেতারা বলেন, গতকালের মতো আজও মেলা শুরু থেকে রাত পর্যন্ত রয়েছে মানুষের ভিড়। অনেক ব্যস্ত সময় পার করছি। মেলার শুরুতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি ছিল না। তবে এখন বেচাবিক্রি বেড়েছে। এখন প্রতিদিনই যেন অতীতের বিক্রির রেকর্ড ভাঙছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় (২০২৫) এবারে ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। আর বাকি ১১টি স্টল সাতটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া। এবারের বাণিজ্যমেলা সাজানো হয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান থিমে। এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কালচারাল সেন্টার, টেকনোলজি কর্নার, রিক্রিয়েশন কর্নার এবং উত্তর-পূর্ব (৬ একর) পাশে শিশু পার্ক ও উত্তর-পশ্চিম পাশে ছত্রিশ জুলাই চত্বর ও নামাজ ঘর রয়েছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।