বিমা খাতে লুটপাটকারীদের শাস্তি দিতে হবে : সাঈদ আহমদ

বিমার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে সবার সহযোগিতা চাই জানিয়ে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি সাঈদ আহমদ বলেছেন, বিমা আহরণের ক্ষেত্রে দেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা চলছে। এটা বন্ধে নীতি নির্ধারকদের সাথে আলোচনা করবো। কারণ এই অসম প্রতিযোগিতা হলে বিমা খাত আরও সমস্যায় পড়বে। বিমা খাতের লুটপাট, দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অন্যের অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করতে দেব না। বিমায় অনিয়ম লুটপাট যারা করেছে, তাদের শাস্তি হতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনস্থ ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে সাঈদ আহমদ এসব কথা বলেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
অনুষ্ঠানে সাঈদ আহমদ আরও বলেন, ব্যক্তি জীবন, ভবন ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য বিমার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারি ভবনসহ সব ধরনের অবকাঠামো বিমার আওতায় আনতে আইন করতে হবে।
দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ৮০টি বীমা কোম্পানির সংখ্যা, আমার মতে কম জানিয়ে সাঈদ আহমদ বলেন, বিমা এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এটার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সমন্বয় করা প্রয়োজন। সম্মিলিতভাবে প্রায় ১ কোটি ৮৯ লাখ ব্যক্তিকে বীমার আওতায় এসেছে। এতো অগ্রগতির পরেও বাংলাদেশে ইন্সুরেন্সের অবদান জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ২ শতাংশ, পাকিস্তানে দশমিক ৮ শতাংশ।
বিমা খাতের তথ্য তুলে ধরে সাঈদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো জীবন বিমা খাতে প্রাইভেট বিমা কোম্পানিগুলোর উপার্জিত প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বেসরকারি জীবন বিমা খাতের লাইফ ফান্ড ২০২৩ সালে ৩২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বেসরকারি জীবন বিমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৩৬ হাজার ৮৫৩ কোটি ৬০ টাকা। বেসরকারি খাতে জীবন বিমা কোম্পানির মোট সম্পদ ২০২৩ সালে ৪৪ হাজার ২২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল চার হাজার ২৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ২০২৩ সালে সম্পদ এর পরিমাণ ১১ হাজার ৬৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বিমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৫ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাঈদ আহমদ বলেন, বিমা কোম্পানি সেবামূলক কাজ করছে। সেখানে তারা সেবার নামে কেন টাকা নেবে, এটা হতে দিতে পারি না। সেবার নামে বাণিজ্য করবেন তা হতে দেব না। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের টাকা তছরুপ করবেন, ছিনিমিনি খেলবেন বিআইএ তা হতে দেবে না। আমরা তা মানবো না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। কয়েকটি সংস্থার জন্য পুরো খাত প্রশ্নের মুখে পড়বে এটা হতে দেব না। এই খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বেশি। কারণ এই খাতের উন্নয়নে পলিসি করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে অবদান বাড়বে।
বিমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ আহমদ বলেন, দাবি পূরণ না হলে জনমনে হতাশা তৈরি হয়। গ্রাহকের টাকা নিয়ে অনেক বিমা কোম্পানির পরিচালকরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কয়েকটি কোম্পানিতে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। এতে বিমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। সেই আস্থা ফেরাতে বিআইএ কাজ করবে।
তথ্য রক্ষণ ও ব্যবহারে ফি দেওয়ার প্রসঙ্গে সাঈদ আহমদ বলেন, গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। সেই তথ্য রক্ষণ ও ব্যবহারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও সার্ভিস ফি দিতে হচ্ছে। এটি দিতে আমরা রাজি না, এটি নিয়ে আমরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবো।