‘অর্থনীতির অবস্থা বোঝার জন্য নীতিনির্ধারকদের উচিত বাজারে আসা’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কতটা খারাপ তা বোঝার জন্য আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত সরাসরি বাজারে এসে দেখা। আমাদের রেস্তোরাঁ সেক্টরে বিক্রি ৪০ শতাংশ কমে গেছে।’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিভি ও এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ইমরান হাসান।
ইমরান হাসান বলেন, ‘সবার আগে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটা আমাদের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু আপনি তা করতে পারছেন না। রাস্তার পাশে খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে;এরপর হাসপাতালে যাচ্ছে। আপনি সেখানেই বড় বাজেট দিচ্ছেন। অথচ পরিকল্পনা করে একটা বাজেট রেস্তোরাঁ খাতে রাখা জরুরি। সেটা আপনি দেবেন না,আপনি দেবেন স্বস্থ্যে খাতে। কারণ আপনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন না।’
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি বলেন,’বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের যে কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বৈষম্য আরও বেড়েছে। অথচ এই বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কতটা খারাপ তা বোঝার জন্য আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত সরাসরি বাজারে এসে দেখা। আমাদের রেস্তোরাঁ সেক্টরে বিক্রি ৪০ শতাংশ কমে গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতোমধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি ৫ আগস্টের পর থেকে। আরও তিন-চারটি বন্ধ করার পথে।’
ইমরান হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের কেউ কেউ বলছেন, রমজান মাসে নাকি দ্রব্যমূল্য কম ছিল। বাস্তবে কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বিক্রিই যদি না হয়, তাহলে কেনার সামর্থ্য থাকবে কোথা থেকে? তখন ছিল সবজির মৌসুম—মূল্য কিছুটা স্বাভাবিক থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু রাজনীতিকের মতো যদি আপনারাও বলেন, অর্থনীতি ঠিক আছে। আমরা আইসিইউ থেকে বের হয়ে এসেছি। সেটা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই, আপনারা জানুন—আমাদের প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ করপোরেটদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আপনারা নানা সুবিধা দিচ্ছেন। ব্যাংক তাদের সহজে ঋণ দেয়, তারা টাকা চুরি করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমরা বছরের পর বছর ধরে বলছি—আমাদের খাতে ব্যাংক কোনো ঋণ দেয় না।’
‘করোনাকালেও দেখা গেছে, সব কিছু গেছে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে। তাদের অভাব বোধহয় শেষ হওয়ার নয়। অথচ আমাদের এই প্রান্তিক সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দুই কোটি মানুষ। দেশের ২০ শতাংশ কনজিউমার ফুড আমাদের মাধ্যমে কনজিউম হয়। অথচ আমাদেরকে মার খেতে হয় করের জালে, ভ্যাটের জালে। ১৩-১৪টি অধিদপ্তর থেকে আমাদের লাইসেন্স নিতে হয়। সামান্য কিছু হলেই রেস্তোরাঁ সেক্টরের ওপর দোষ চাপানো হয়’, যোগ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির এই নেতা।
ইমরান হাসান বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো একটি নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এটা আমাদের মৌলিক চাহিদা। এর জন্য পরিকল্পনা করে একটি আলাদা বাজেট প্রয়োজন। অথচ আপনি তা না করে বাজেট দিচ্ছেন শুধু স্বাস্থ্য খাতে। কারণ, আপনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারছেন না বলেই স্বাস্থ্য খাতে খরচ বাড়ছে।’