অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাবির নিয়োগকে ‘বৈধ’ দাবি নিয়োগপ্রাপ্তদের

১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সম্প্রতি অ্যাডহক নিয়োগকে ‘বৈধ’ দাবি করেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা এমন দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ কর্মস্থলে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগনেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে আমাদের নিয়োগকে ‘অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এর ১২(৫) ধারা অনুযায়ী, এই নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী, এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার আগে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের উপরিউক্ত ধারা বাতিল করা উচিত ছিল।’
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাত শতাধিক পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে। আমরা ওই শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেই। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারেননি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান গত ৫ মে ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১২(৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে শূন্যপদের বিপরীতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১৩৮ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ প্রদান করেন।’
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘গত ৮ মে দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আব্দুস সালামকে দিয়ে আমাদের যোগদানের চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেছে। আমাদের জানামতে, নিয়মিত উপাচার্যের প্রদানকৃত নিয়োগ, দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য স্থগিত করতে পারেন না।’
শিবিরের হামলায় পা হারানো এ নেতা আরও বলেন, ‘১৯৭৩-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে অ্যাডহক নিয়োগ একটি বৈধ প্রক্রিয়া। অতীতে প্রায় সব প্রশাসন-ই অ্যাডহক ভিত্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পরও চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাডহক নিয়োগ বন্ধ রাখতে ২০০৯ সালেও একই রকম নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে নিজ অধ্যাদেশ বলে অ্যাডহক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা আরও বলেন, ‘রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী জামাত-শিবির চক্রের হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই জামায়াত-শিবির চক্রের নৃশংস হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ইতোমধ্যে অনেকের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ, তাই বেকার ও মানবেতর জীবন-যাপন করছিলাম। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাই আমাদের নিয়োগের ওপর আরোপিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
এ সময় নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াছ হোসেন ও রায়হান মাসুদ, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদীন, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আতিকুর রহমান সুমন, সহসভাপতি মো. ফারুক হাসান, সাবেক ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক টগর মো. সালেহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।