রাবি উপাচার্যের ১৪১ জনকে নিয়োগ, মন্ত্রণালয় বলছে ‘অবৈধ’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের নিয়োগের ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা অমান্য করে প্রায় দেড়শ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) ১৪১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষদ শাখার দপ্তর প্রধান সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মামুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে এই নিয়োগকে ‘অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত’ বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম অ্যাডহক নিয়োগপত্রে কোনো স্বাক্ষর করেননি। সেখানে রেজিস্ট্রার হিসেবে স্বাক্ষরের নির্বাহী আদেশ দেওয়া হয়েছে সংস্থাপন শাখার উপরেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীকে। তাঁর স্বাক্ষরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে মোট ১৪১ জন অ্যাডহক নিয়োগ পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যালয়ের আদেশে দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে নয়জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী ও সাংবাদিক।
নিয়োগের তালিকায় উল্লেখ রয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ১২ (৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এসব প্রার্থীকে তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও স্থানে অ্যাডহক অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।’
জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সব নিয়োগ স্থগিত রাখতে বলা হয়। তবে উপাচার্য আব্দুস সোবহান দায়িত্বের শেষ দিনে হলেও নিয়োগ দিয়েই ছাড়বেন, এমন আশঙ্কায় গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একাধিকবার মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনা ঘটেছে।
আজ দুপুরে পুলিশের নিরাপত্তায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ হয়েছে কি না, আপনারা পরে জানতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্যসাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে নানাভাবে অনৈতিক চাপ প্রদান করা হয়েছিল। তাই আমি দুদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলাম।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, এ নিয়োগের ফলে পরবর্তী সময়ে যে প্রশাসন আসবে—তাকে এর মাশুল দিতে হবে। ইউজিসি যদি অ্যাডহকের বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন ক্যাম্পাসে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে রাবির বিদায়ী উপাচার্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে রাবির বিদায়ী উপাচার্যের মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়োগ ও অনিয়ম প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে এ কমিটিকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাকির হোসেন আখন্দ এবং ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ কার্যক্রমসহ আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রশাসনিক কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে উপাচার্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’
‘কিন্তু উপাচার্য আজ তাঁর শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়ের উক্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, যা অনভিপ্রেত।’
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘বিদায়ী উপাচার্যের অবৈধ জনবল নিয়োগের বৈধতা প্রাপ্তির সুযোগ নেই বিধায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলো।’