নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে জাবিতে বর্ণিল আয়োজন

‘নববর্ষের ঐক্যতান, ফ্যাসিবাদের অবসান ও মানবতার জয়গান’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আয়োজন করা হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। উৎসবমুখর পরিবেশে রঙিন হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির অন্যতম সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতুর সূচনা হয় বৈশাখ মাস থেকেই। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সারাদেশের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
গ্রামবাংলার লোকজ সংস্কৃতি, মাটির সরা, মুখোশ, চিত্রশিল্প ও রঙিন মোটিফ দিয়ে সাজানো হচ্ছে এবারের বৈশাখ ১৪৩২-এর আয়োজন। সাদা রঙের সোনালি ডানাওয়ালা পাখি ব্যবহার করে তরুণদের উদ্যম ও শুভ্রতাকে তুলে ধরা হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে “গাজীর পট ও জোড়া পাখি” যার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের একতাবদ্ধতাকে প্রকাশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে থাকছে “মুষ্টিবদ্ধ হাত”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে কাগজ কেটে মুখোশ তৈরি করছে, কেউ রঙ তুলিতে চিত্র আঁকছে, আবার কেউ মাটির সরায় নকশা করছে। চারপাশে বইছে সৃজনশীলতার আমেজ।
পান্তা ভোজনের মাধ্যমেই জাবিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হবে। পান্তা ভোজনের পরে অনুষ্ঠিত হবে প্রভাতের গান ও বৈশাখী শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। মধ্যাহ্নভোজের পরে বিকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রযোজনায় রয়েছে লোকখেলা ও সন্ধ্যায় রামায়ণ গানের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হবে এবারের বর্ষবরণ। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বর্ষবরণ কমিটির আহ্বায়ক ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল হাবীব বলেন, “চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। এবারের আয়োজন আরও বর্ণিল ও অর্থবহ। সন্ধ্যায় থাকছে ‘রামায়ণ গান’—যা দর্শকদের জন্য ভিন্নধর্মী এক পরিবেশনা হতে যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা একটি মানবিক ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হোক।”
কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক জানান, “আমাদের অনুষদের নয়টি বিভাগই ১৩ ও ১৪ এপ্রিল নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। আজকের অন্যতম আকর্ষণীয় ইভেন্ট হচ্ছে ‘ব্যাঙের পান চিনি’। আগামীকাল দিনব্যাপী চলবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমাদের উদ্দেশ্য হলো-অতীত-ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরা এবং শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিচর্চায় যুক্ত রাখা।”
বর্ষবরণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। পুরো আয়োজন যেন নববর্ষকে ঘিরে নতুন আশা ও ঐক্যের বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে।