কর্মক্ষমতা বাড়াতে যা করবেন

আপনি কি অফিসের কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকেন এবং চাকরি নিয়ে হতাশ থাকেন? আপনার কি মনে হচ্ছে, আপনি দিনের অর্ধেকটা সময় অগ্নিকুণ্ডের ভেতর অযথা পার করছেন? অবশ্য এই সমস্যা শুধু আপনার একার নয়। ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ কোলেনা ওর মনে করেন, প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই নিজের চাকরি জীবনে এমনটাই অনুভব করে থাকেন। আর এর পেছনের প্রধান কারণ মানুষ নিজেই। আমাদের অভ্যাস, আমাদের আচরণ দিনকে দিন আমাদের অকার্যকর করে তুলছে। আমরা যদি সফল হতে চাই এবং ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চাই তাহলে আমাদের এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। জিকিউ ওয়েবসাইটে ক্যারিয়ার ধ্বংসের ক্ষেত্রে আমাদের পাঁচটি অভ্যাসকে দায়ী করেছে, যা অবশ্যই আমাদের পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
১. আয়ত্তে না থাকলে অভিযোগ কেন
আপনি কি অনেক বেশি অভিযোগ করেন? আবার অফিসের এমন অনেক জিনিস আছে যার কারণে আপনি বিরক্ত হন? এই যেমন ধরুন- আপনার কম্পিউটারের ইন্টারনেট দুর্বল অথবা অফিসের রিসিপশনিস্টের বারবার ফোন রিসিভ কারায় আপনি কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না বলে বিরক্ত হচ্ছেন?
প্রথমত, বারবার অভিযোগ করার মতো খারাপ আচরণ আর কিছুই হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, আপনি এমন একটি ব্যাপারে নিজের মনোযোগ এবং মানসিক শক্তি ক্ষয় করছেন যে জিনিসগুলো আপনার নিজের আয়ত্তে নেই। এই অভ্যাস শুধু আপনার কর্মক্ষমতাকেই নষ্ট করছে না বরং কলিগদের সঙ্গে সম্পর্কও নষ্ট করছে। যখন আপনি এ ধরনের কোনো সমস্যায় ভুগবেন, তখন বোঝার চেষ্টা করবেন যে, এই বিষয়টি আপনি সমাধান করতে পারবেন কি না। আর যদি না পারেন তাহলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বরং এদিকে সময় নষ্ট না করে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নজর দিন।
২. অফিস ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না হওয়া
অনেক অফিসই আছে যেখানে সরাসরি বস আপনার বোনাস বা পদোন্নতির হিসাব রাখে না। সেখানে ম্যানেজারই হিসাব রাখেন, কে ভালো কাজ করছে, আর কার কাজে মন নেই। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে ম্যানেজারের সঙ্গে এমন সম্পর্ক রাখতে হয় যাতে ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ারে উন্নতি হয়। আর তখনই আমরা অফিস ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ি। অন্যের বদনাম করতে শুরু করি। কাজের কারণে অনেক সময় কলিগরা বিরক্ত হয়ে নানা কথা বলে ফেলেন সেগুলো টুকে রেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কানে লাগানো, এই বিষয়টি একেবারেই ভালো নয়। এমনকি আপনিও অন্যের দ্বারা এই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। তাই এসব কাজ থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনি যদি ভালো কাজ জানেন, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই আপনার সফলতাকে আটকে রাখতে পারবে না।
৩. বিভিন্ন কাজ জমিয়ে না রাখা
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ তাদের অফিসের কাজ জমিয়ে রাখে। এমনকি নিজের ইমেইল ভর্তি থাকে যার প্রতি নজর থাকে না, কাগজপত্র এলোমেলো থাকে, যা কাজের মনোযোগ নষ্ট করে। এমনকি এসব দিকে মনোযোগ দিয়ে আমরা দিনের অন্তত দুই ঘণ্টা নষ্ট করি। অথচ এই সময়টাতে আমরা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারি। যা না করার কারণে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ি। সব সময় নিজের ইমেইল চেক করবেন ও প্রয়োজনীয় উত্তর দিয়ে ঝাড়া হাত-পা থাকবেন। অফিসের কাজ জমিয়ে না রেখে সঙ্গে সঙ্গেই করে ফেলার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, এতে আপনি বছরে ছয় সপ্তাহের বেশি নিজের জন্য সময় বাঁচাতে পারবেন।
৪. কাজে গড়িমসি না করা
অনেক সময় বিরক্ত হওয়ার কারণে কাজে আলসেমি করি। গড়িমসি করে কাজ করি না। তাতে কোনো পরিকল্পনা থাকে না, থাকে না কোনো সফলতার আকাঙ্ক্ষা। আর এ কারণেই আমরা উন্নতি থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ি। হতাশা কাটিয়ে প্রতিদিন কী কী কাজ করবেন তার একটা রুটিন করে ফেলুন। সব সময় কাজের মাঝে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিন। এতে পরে কাজ করার আগ্রহ ফিরে পাবেন।
৫. নিজের জন্য সময় রাখা
অনেক সময় আমরা ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য একটানা কাজ করতে থাকি। যা কিছু সময়ের জন্য আমাদের উন্নতি দেয় ঠিকই। কিন্তু একটা সময়ে আমাদের ভেতর থেকে সৃজনশীলতা হারিয়ে যায়। বিশ্রাম নেওয়া, ছুটি নেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, মেডিটেশন যাই করুন না কেন, এই সময়টুকুই আপনার মধ্যে সৃজনশীলতা ধরে রাখে। পরবর্তীকালে আপনি কাজে আগ্রহ খুঁজে পাবেন। এমনকি পরিমিত ঘুমও আপনার কাজের গতিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই নিজেকে সময় দিন, যাতে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ হারিয়ে না যায়।