মা যখন অফিসে

প্রতিদিন সকালে জয়িতাকে বাসায় রেখে অফিসে যেতে রেহানার কান্না পেয়ে যায়। কতই বা বয়স জয়িতার? সবে সাত পেরিয়ে আটে পা দিয়েছে। এখন স্কুলে রমজানের ছুটি চলছে। সারাটা দিন ছোট ফ্ল্যাটে ঘরবন্দি হয়ে থাকছে মেয়েটা। রেহানার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। আর ওর স্বামীর তো বাসায় ফিরতে রাত হয় আরো। শুধু মেয়েটাকে সঙ্গ দিতে না পারার কষ্ট নয়, সারা দিন অফিসে নানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে জয়িতার জন্য দুশ্চিন্তা হয় রেহানার। ঠিকমতো খেয়েছে তো জয়িতা? সারাক্ষণ কি টেলিভিশন দেখছে? অচেনা কাউকে দরজা খুলে দিল না তো? হঠাৎ শরীর খারাপ করল নাকি? যতক্ষণ না বাসায় ফিরে মেয়েকে সুস্থ-স্বাভাবিক দেখছে, ততক্ষণ নানা দুশ্চিন্তা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় রেহানাকে।
রেহানার গল্পের সঙ্গে কি আপনার জীবনের বেশ মিল খুঁজে পাচ্ছেন? মিল পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। যেসব কর্মজীবী মা সন্তানকে বাসায় রেখে অফিস করেন, তাঁদের গল্প তো প্রায় সব একই রকম। মা ছাড়া সন্তানকে সার্বক্ষণিক দেখভাল মায়ের মতো করার লোকের বড্ড অভাব। সংসারে যত মানুষই থাকুক না কেন, মায়ের মতো যত্ন কেউ নেবে না। আর যাঁরা একক পরিবারে থাকেন, তাঁরা যদি কাজের লোকের কাছে সন্তানকে রেখে যান তাহলে তো ভরসার জায়গা আরো কম।
বাসায় শিশুসন্তানকে রেখে অফিস করলে প্রায় সব মায়ের মনেই একটা অপরাধবোধ কাজ করে। একা একা থাকলে সন্তানের মনেও বাসা বাঁধে অভিমান। কীভাবে সামলাবেন এই সংকট, পেরেন্টস ডটকম জানাচ্ছে সমাধানের পথ।
১. বাসায় মা সব সময় কাছে না থাকলে সন্তানের মনে অভিমান বাসা বাঁধে। ওকে ওর মতো করে বোঝান। ওকে বোঝান ওর স্কুলে যাওয়ার মতো আপনাকেও প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। মাঝেমধ্যে ওকে সঙ্গে করে অফিসে নিয়ে যান। তাতে ও আপনার কাজের পরিবেশটা বুঝতে পারবে।
২. ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে স্বনির্ভর হতে শেখান। আপনার অনুপস্থিতিতে এতে ওর সুবিধা হবে। নিজের জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখা, নিজের হাতে খাবার খাওয়া, জামা-জুতা খোলা-পরা ওকে শেখান।
৩. শিশুর মানসিক সুস্থতা পরিবেশের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন। আপনার অনুপস্থিতিতে কোনো সমস্যায় যেন সবাই এগিয়ে আসতে পারে, তাই সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ছুটির দিনে মাঝেমধ্যে সবার বাসায় বেড়াতে যান।
৪. সন্তানের স্কুল, বন্ধুর অভিভাবক, সন্তানের শিক্ষক, আপনার প্রতিবেশী সবার ফোন নম্বর সব সময় নিজের কাছে রাখুন, যাতে অফিসে বসেও যেকোনো প্রয়োজনে আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
৫. মাঝেমধ্যেই সন্তানকে ফোন করে তার খোঁজ-খবর নেবেন। ও যেন কখনো অনুভব না করে যে আপনি তাকে অবহেলা করছেন।
৬. সন্তানকে শেখান বাসায় একা থাকলে ও যেন কাউকে দরজা না খুলে দেয়। আপনার পরিচিত সবাইকে বলে দিন আপনার অনুপস্থিতিতে বাসায় না আসতে।
৭. বাসায় একটা ফোন ডায়েরি রাখুন। তাতে প্রয়োজনীয় সব নম্বর লিখে রাখুন।
৮. খুব বিশ্বাসী না হলে শিশুকে একা কাজের লোকের সঙ্গে বাসায় রাখবেন না। আপনার শিশু কাজের লোকের সঙ্গে থাকতে স্বছন্দবোধ করছে কি না, তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নজরে রাখুন।
৯. বাসায় একটা ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন।
১০. বাসায় ফেরার পর ফ্যামিলি টাইমের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করবেন না। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। ওর প্রতিদিন কেমন কাটল, কীভাবে কাটল তা জেনে নিন। ওর বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, শিক্ষকদের নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলুন। একসঙ্গে খাবার খান, টিভি দেখেন। ওর হোমওয়ার্ক করান।
১১. সন্তানকে ওর শখের কাজে উৎসাহিত করুন। অবসর সময়টা এতে ওর ভালো কাটবে।
১২. সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না বলে উপহার দিয়ে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করবেন না। সময় দিতে না পারার জন্য মনে দুঃখবোধ কাজ করলে মাঝেমধ্যে ছুটির দিনের পুরোটা সময় ওকে দিন। আপনার সঙ্গই হবে ওর জন্য সেরা উপহার।