ট্রাম্পের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের মধ্যেই ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট উধাও
বিশ্বব্যাপী মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত বৈদেশিক সাহায্য ও উন্নয়নের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্থগিতাদেশের ফলে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই ও ছুটির মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি অসংখ্য প্রকল্পও বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে। খবর সিএনএন।
ডেমোক্র্যাটরা খোলাখুলি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতা করছে, কারণ তাদের আশঙ্কা ট্রাম্প হয়তো ইউএসএআইডিকে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে বন্ধ করে একে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে নিয়ে যেতে পারেন।
ডেমোক্র্যাটদের মতে, কংগ্রেসের অর্থায়নকৃত একটি স্বাধীন সংস্থা প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বন্ধ করতে পারেন না এবং ইউএসএআইডির কাজ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, বিশাল পরিমাণ বিদেশি সহায়তা ও উন্নয়ন কর্মসূচি অপ্রয়োজনীয় এবং করদাতাদের অর্থের অপচয় মাত্র। তারা বিশেষ করে এমন প্রকল্পগুলোর বিরোধিতা করছেন, যা তথাকথিত উদারপন্থী সামাজিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নেয় বলে তারা মনে করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ৯০ দিনের জন্য সব বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। এরপর স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে হাজার হাজার উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায় এবং কর্মীদের ছাঁটাই শুরু হয়।
কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ইউএসএআইডি নিয়ে মতবিরোধ চলছে। রিপাবলিকানরা চান, ইউএসএআইডির অর্থ ও নীতিগত নিয়ন্ত্রণ স্টেট ডিপার্টমেন্টের হাতে যাক, আর ডেমোক্র্যাটরা সংস্থাটির স্বাধীনতা ও ক্ষমতা বজায় রাখতে চায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও তিনি বিদেশি কার্যক্রমের বাজেট এক-তৃতীয়াংশ কমানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি শুক্রবার এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কংগ্রেসের অর্থায়নকৃত সংস্থা বিলুপ্ত করতে পারেন না। তিনি অভিযোগ করেন, "ট্রাম্প সংবিধানবিরোধী সংকটের দিকে এগোচ্ছেন" এবং "এটি একনায়কদের মতো আচরণ, যারা ধনকুবেরদের স্বার্থ রক্ষার জন্য করদাতাদের অর্থ লুট করতে চায়।"
ট্রাম্পের ফেডারেল সরকার ছোট করার নীতিতে পরামর্শ দিচ্ছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক। এক্সে ইউএসএআইডি বিলুপ্তির আহ্বান জানানো পোস্টগুলো তিনি সমর্থন করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, প্রশাসন ইউএসএআইডির বিভিন্ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করছে, যাতে কেবল জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালু রাখা হয়। তবে তিনি ইউএসএআইডিকে বিলুপ্তির বিষয়ে কিছু বলেননি।
অন্যদিকে, ইউএসএআইডির কর্মীরা শুক্রবার ও শনিবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে গেছেন, সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
১৯৬১ সালে শীতল যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ইউএসএআইডি গঠন করেন, যার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলা করা। বর্তমানে ইউএসএআইডি চীনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' উদ্যোগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দাতা দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মোট বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ বিদেশি সহায়তায় ব্যয় করে। যদিও সামগ্রিকভাবে কিছু ইউরোপীয় দেশ বিদেশি সহায়তার জন্য বাজেটের বেশি অংশ ব্যয় করে থাকে।