অবৈধ ভারতীয়দের যেভাবে ফেরত পাঠাল ট্রাম্প প্রশাসন
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/haatkrraa.jpg)
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে শতাধিক ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ সময় তাদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজটি ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে পাঞ্জাবে অবতরণ করে। এ সময় দেশটির গণমাধ্যমগুলোকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, হাতকড়া আর শিকল পরানোর লজ্জা ঢাকতেই এমনটি করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
তবে কড়া নিরাপত্তা নিলেও বিষয়টি গোপন রাখাতে পারেনি ভারত। হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় ভারতীয়দের বিমানে তোলার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন আমেরিকার বর্ডার প্যাট্রোল (ইউএসবিপি) বিভাগের প্রধান মাইকেল ডব্লিউ ব্যাংকস। সেখানে দেখা যায় অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে বিমানে তোলা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ্ক্সের ওই পোস্টে ব্যাংকস লিখেন, ‘সফলভাবে ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রথম অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক বিমান দূরের পথ পাড়ি দিবে। অভিবাসন আইন প্রয়োগ ও অবৈধদের দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আপনি অবৈধভাবে প্রবেশ করেন, আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ায় (পিটিআই) সাক্ষাৎকার দেন যুক্তরাষ্ট্র ফেরত জসপাল সিং। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম না যে আমাদের ভারতে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অন্য ক্যাম্প বা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের হাতকড়া পরানো হয়েছে এবং পায়ে শিকল পরানো হয়েছে।"
এর আগে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার ঘোষণা অনুযায়ী তার প্রশাসন কাগজপত্রহীন বিদেশি নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নেয়। মার্কিন প্রশাসন বলছে, তারা ১৮ হাজার ভারতীয় অভিবাসীকে শনাক্ত করতে পেরেছেন, যারা অবৈধভাবে দেশটিতে ঢুকেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসন প্রত্যাশীদের গ্রহণ করতে একটি বিশেষ কাউন্টার খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ। মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজে ১০৪ ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন। নিয়মিত যাত্রীদের থেকে আলাদাভাবে বিশেষ কাউন্টারের মাধ্যমে তাদের গ্রহণ করা হবে। এরপর বাসযোগে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরত পাঠাতে সামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে উড়োজাহাজে করে অভিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘটনা নতুন কিছু না। এর আগে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এক হাজারের বেশি ভারতীয়কে চার্টার ও বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর অক্টোবরে শতাধিক ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক সংস্থা আইসিই।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদের কাছে ছিল না। তবে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই শিখপ্রধান পাঞ্জাব ও প্রতিবেশী হরিয়ানা রাজ্যের। এসব অঞ্চল থেকেই বিদেশে পাড়ি জমানোর ঘটনা বেশি ঘটেছে। এছাড়া মোদির রাজ্য গুজরাট থেকেও বহু মানুষ দেশ ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছেন।
অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বার্নস্টেইন মুরেই বলেন, গেল কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয়দের তাড়ানোর ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের অনুপ্রবেশের ঘটনাও আগের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার ৪৭৭ ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করেছে আইসিই। সবচেয়ে বেশি বিতাড়নের ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালে—দুই হাজার ৩০০ জন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে কত সংখ্যক অবৈধ ভারতীয় আছেন, সেই সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে জানা সম্ভব হয়নি। পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যাটা সাত লাখ ২৫ হাজার হবে। তার মানে মেক্সিকো ও এল সালভাদরের পরেই যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট বলছে, এই সংখ্যাটা তিন লাখ ৭৫ হাজার হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর দিকে থেকে ভারত পঞ্চম স্থানে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের মধ্যে তিন শতাংশেরই কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ২২ শতাংশের জন্ম বিদেশে। আইসিইর নথি বলছে, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না, এমন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের তালিকা আটক হয়নি এমন ব্যক্তিদের ডকেটে দেখা গেছে। তাদের বিতাড়িত করার চূড়ান্ত আদেশ রয়েছে। তালিকায় ১৭ হাজার ৯৪০ ভারতীয় রয়েছেন।