২৫৯ বছরের ঐতিহাসিক ‘আওকরা মসজিদ’

উত্তরের জেলা দিনাজপুর। আর এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেসব ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হলো খানসামা উপজেলার প্রায় ২৫৯ বছরের পুরোনো ‘আওকরা মসজিদ’। এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের পাকেরহাট গ্রামের সীমান্তে হাসিমপুর এলাকার বুক চিরে বয়ে চলা বেলান নদীর তীরে মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।
প্রাচীন এই মসজিদকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা ধরনের কথা। এটির নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ‘আওকরা’ শব্দের অর্থ কথা বলা। জনশ্রুতি আছে, এই মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা বললে প্রতিধ্বনি হতো। তাই স্থানীয়রা মসজিদটির নাম রাখেন ‘আওকরা’ বা কথা বলার মসজিদ। তবে নির্মাণের সময় মসজিদটি কি নামে পরিচিত ছিল তা স্থানীয়দের কেউ বলতে পারেননি।
জানা যায়, এক সময় মসজিদের আশপাশে ছিল মুসলিম জনবসতি। মির্জা লাল বেগ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা ভেবে ১৭৬৬ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময়ে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হতো। এই মসজিদকে ঘিরে মির্জার মাঠেই একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আওকরা নামে স্থাপন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি সবার নজর কেড়েছে। তবে সংস্কারের অভাবে প্রাচীরগুলোতে ধরেছে ফাটল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেকোনো মুহূর্তে মসজিদটি ধসে পড়তে পারে।
এদিকে কয়েক বছর আগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদটিকে ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করলেও তা কাগজ কলম আর সাইনবোর্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কর্তৃপক্ষ নেয়নি কোনো সংস্কারের উদ্যোগ। দ্রুত মসজিদটি সংস্কার করার দাবি জানায় এলাকাবাসী।
অত্র মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর স্থানীয়রা পরিষ্কার করে নামাজ আদায় করা শুরু করে। আশা করছি, সরকার দ্রুত মসজিদটি সংস্কার করে দেবেন। তাহলে আমরা নিরাপত্তার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারব।’
অত্র মসজিদের সভাপতি মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা মসজিদটি পরিষ্কার করে টিনের ছাউনি, মাইক ও নলকূপ স্থাপন করেছি। নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে মসজিদটি। তবে মসজিদটি দ্রুত সংস্কার না করলে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
দিনাজপুর প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর ও কান্তজিউ মন্দিরের সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান বলেন, মসজিদটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পরিদর্শন করে সংস্কার করা হবে।