ছয়শ বছরের টোক সুলতানপুর শাহী মসজিদ

মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী ছয়শ বছরের পুরোনো শাহী মসজিদ গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, ইসলাম প্রচারের জন্য গাজীপুরে এসেছিলেন ৩৬০ জন আউলিয়া, যাদের মধ্যে ১৩১তম ছিলেন শাহ সুলতান। তার নামেই এই গ্রামের নাম হয় সুলতানপুর।
ঐতিহাসিক তথ্যমতে, মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে ঈশা খাঁ ও মানসিংহের যুদ্ধকালে নির্মাণ করা হয় এই শাহী মসজিদটি। সুরকি ও ইটের সংমিশ্রণে মসজিদের প্রধান কাঠামো নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে একটি গম্বুজ ছাড়া প্রাচীন সু-দর্শন আর দেখা যায় না মসজিদটিতে। যেখানে আনুমানিক বলা হচ্ছে মসজিদের সংস্কারকাল অস্পষ্টভাবে খোদাই করে লেখা আছে ১৩৪৬। পরবর্তী কালে ১৯৮৭ সালে মসজিদটি আরোও সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে মসজিদের সভাপতি মাহমুদুল আলম নজরুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আপনারা সকলেই জানেন এই মসজিদটি ঈশা খাঁ ও মানসিংহের আমলে তৈরি হয়েছে। যার বয়সকাল প্রায় ৬০০ বছর। এটা এলাকার অতি পুরাতন ও প্রাচীন মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রায় শুক্রবার দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ জুমার নামাজে শরীক হয়। তাদের দানের ও অর্থের বিনিময়ে এই মসজিদটি পরিচালিত হয়। সাথে আছে সুলতানিয়া হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসা, যেখানে ৩০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এখানে ১৩ জন শিক্ষক ও সাতজন কর্মচারী রয়েছেন। শুধু তাই নয়, মসজিদের পাশে একটি জায়গায় কবরস্থান তৈরি হয়েছে হতদরিদ্র মানুষের জন্য। বর্তমানে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা এবং দানের মাধ্যমে এই মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।
সুলতানপুর শাহী মসজিদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক (ক্যাশিয়ার) মো. শহীদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, এই ঐতিহাসিক সুলতানপুর শাহী মসজিদ আশেপাশের যে কয়েকটি অঞ্চলের মসজিদ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। মুঘল আমলে সৃষ্টি হওয়া এই মসজিদে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গফরগাঁও ও ময়মনসিংহসহ গাজীপুর থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ শুক্রবার দিন (জুম্মার) নামাজ পড়তে আসে। তারা হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগল ইত্যাদি দান করে থাকে। এই দানের টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নের কাজ হয়। এলাকাবাসীও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে। মসজিদে আগত দানের টাকা প্রতি শুক্রবারে হিসাব নিকাশ করে রোববার দিন মসজিদের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়। পাশাপাশি মাসে এক বার করে হলেও এলাকাবাসীকে একাউন্টে অর্থের পরিমাণ জানিয়ে দেওয়া হয়।
সুলতানিয়া দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান মোহতামীম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইকে জানান, মসজিদভিত্তিক এই সুলতানিয়া দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং একটি এতিমখানা তৈরি হয়েছে। এতিম খানা ও অত্র প্রতিষ্ঠানের খরচ মসজিদের ফান্ড থেকেই ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের সুলতানিয়া দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ১৩ জন শিক্ষকসহ ২১ জন স্টাফ রয়েছেন।
সুলতানপুর শাহী মসজিদে শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়ান মাওলানা মাহফুজুর রহমান। তিনি জানান, এই মসজিদটি ছয়শ বছরের পুরনো। প্রতি সপ্তাহে মসজিদে দান হওয়া লক্ষাধিক টাকা থেকে মসজিদের উন্নয়ন, এতিমখানা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণ, মিনার নির্মাণ, পাঁচতলায় নির্মিত কিতাব ভবনের কাজে ব্যবহার করা হয়। একইসঙ্গে প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয় এখানে।