সূচক-মূলধন বাড়তি, কমেছে লেনদেন
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/02/03/dse.jpg)
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক উত্থানে পার করল গত সপ্তাহ। লেনদেনের পরিমাণ সপ্তাহটিতে কমলেও পুঁজিবাজার মূলধন বেড়েছে। শীর্ষ দশ লেনদেনের তালিকায় ৬০ ভাগ ছিল দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। এধরনের দুর্বল কোম্পানির শেয়ার শীর্ষে ওঠে আসা ভালভাবে নেননি পুঁজিবাজারের বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত সপ্তাহে সূচকের গতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পুঁজিবাজার মূলধন। এটা পুঁজিবাজারের জন্য গুড সাইন।
দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি জানিয়ে আবু আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহে দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বেড়েছে। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ নিরাপত্তার স্বার্থে ঝুঁকি এড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) ডিএসই সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। তবে আগের সপ্তাহ থেকে আলোচিত সপ্তাহে লেনদেন পরিমাণ কমেছে পাঁচ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাজারে মূলধন পরিমাণ বেড়েছে হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কমার চেয়ে বেড়েছে বেশি। মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশই ১০টি কোম্পানির দখলে।
গেল সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ লেনদেন শীর্ষ ১০টি কোম্পানির দখলে রয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। এদের মধ্যে আটটির শেয়ার দর বাড়লেও কমেছে দুইটির শেয়ার দর। গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার ১০টি কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই ১০টি কোম্পানি লেনদেন করেছে এক হাজার ১৫৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরির বিডি থাইয়ের শেয়ার। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এ ছাড়া ওরিয়ন ইনফিউশনের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৬২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৩৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা, খুলনা প্রিন্টিংয়ের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১১৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ইভেন্স টেক্সটাইলেসের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্সের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা, আফতাব অটোমোবাইলসের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৮২ কোটি এক লাখ টাকা, মালেক স্পিনিংয়ের (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজের (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭৭ লাখ টাকা ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৭ কোটি এক লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকায়।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৫৮৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৮৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৫১ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৮২টির, দর কমেছে ১৭৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১০টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২১৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১০ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই৩০ সূচক দুই দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১১৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১২ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।