লোকসানি সাফকো স্পিনিংয়ের উৎপাদন শুরু

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লোকসানে ডুবে থাকা প্রতিষ্ঠান সাফকো স্পিনিং মিলসের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নানা জটিলতা কমিয়ে দীর্ঘ বন্ধের পর কোম্পানিটি কারখানায় উৎপাদন পুনরায় শুরু করেছে। যদিও সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫ সাল) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান এক টাকা ৪৫ পয়সা। তবুও শিগগিরই এই লোকসান থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশা কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
উৎপাদন কার্যক্রম প্রসঙ্গে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) জানান, সাফকো স্পিনিং মিলসের কারখানা প্রাঙ্গণ গত ৩ ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর একটি দল পরিদর্শন করেন। সেই সময় কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ পায়। নিয়ম মতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি তার উৎপাদন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। একইসঙ্গে পিএসআইয়ের মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে কোম্পানিটি তেমন কিছুই করেনি। এতে আইনের লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি।
ডিএসই আরও জানায়, যদিও উৎপাদন বন্ধ শুরুতে না বললেও পরে কোম্পানিটি বন্ধের বিষয়টি পরিষ্কার করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানি জানায়, সাফকো স্পিনিং মিলসের পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির আরও ক্ষতি কমাতে পরিচালনা পর্ষদ গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। যা ২ মাসের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল কারখানা। তবে কারখানা অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু ছিল। তবে তুলার অতি দাম, লোকসান ও আর্থিক সংকট কারণে বেঁধে দেওয়া সময় দুই মাসের মধ্যে কারখানা চালু সম্ভব হয়নি। পরে দফায় দফায় সময় নিয়ে টানা সাত মাস পর কোম্পানিটি ফের উৎপাদনে ফিরল গত ৩১ জুলাই।
তুলার অতি দাম, বাজার মন্দাসহ বেশকিছু সমস্যার কারনে সাফকো স্পিনিং মিলসের উৎপাদন দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল জানিয়ে কোম্পানির সচিব ইফতেখার আহমেদ বলেন, কিছু জটিলতা কাটিয়ে কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রমে ফিরেছে। আমরা চেষ্টা করছি কোম্পানিটির পূর্বের দিকে ফিরিয়ে নিতে।
গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটি লোকসান গুনছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, লোকসান থেকে কোম্পানিটিকে মুনাফায় ফেরাতে। সেটা মাথায় রেখে উৎপাদনে নেমেছি কোম্পানিটির এই পরিচালনা পর্ষদ। লোকসানের কারণে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড পায়নি। গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পাবে সেটাও এখন বলা যাচ্ছে না। আশা করছি, দেশের পরিবেশসহ অন্যান্য বিষয়গুলো ঠিক থাকলে লোকসান কমিয়ে আনতে পারব।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে এক টাকা ৪৫ পয়সা। আলোচিত অর্থবছরের তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা। তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয় নেগেটিভ পাঁচ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে নেগেটিভ তিন টাকা ৭৫ পয়সা।
এর আগে ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবিগঞ্জের নয়াপাড়ায় কোম্পানির কারখানায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ১৮ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায়। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১২ টাকা ৯৭ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল দুই টাকা ৯৯ পয়সা। শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ৯০ পয়সা।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সাফকো স্পিনিং মিলসের। জেড ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৯ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা দুই কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১৬টি। রিজার্ভে রয়েছে নেগেটিভ ২১ কোটি এক লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে সাত দশমিক শূন্য আট শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১১১ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ২৮ কোটি টাকা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ২০ পয়সা।