অলিম্পিক বাছাইয়ে নারী ফুটবল দল যেতে না পারায় ক্ষুব্ধ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/04/10/kazi-salauddin.jpg)
নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমার না পাঠানো এবং সাফজয়ী সাবিনাদের বিসিবির পুরস্কার নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মধ্যে গত কয়েকদিন যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে, তা চোখে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের। অবশেষে গণমাধ্যমে এই ইস্যুতে মুখ খুললেন তিনি। অলিম্পিক বাছাইয়ে নারী ফুটবল দল যেতে না পারায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
গতকাল রোববার (১০ এপ্রিল) দুই ফেডারেশনের দুই সভাপতির কথার যুদ্ধকে কীভাবে দেখছেন? জানতে চাইলে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি অত্যন্ত সম্মানিত মানুষ, আমাদের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। খেলাধুলায় তার অবদান অবশ্যই অবিস্মরণীয়। খেলাধুলার জগতে তার অবদানকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু উনি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে নিয়ে যে কথাটি বলেছেন তা অশোভনীয় বক্তব্য।’
জাহিদ আহসান রাসেল আরও বলেন, ‘যে কেউ এটা কিন্তু মানতে পারে না। তিনিও (নাজমুল হাসান পাপন) সম্মানিত মানুষ, সংসদ সদস্য ছাড়াও ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। আবার সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াপ্রেমী একজন মানুষ, তিনি খেলাধুলাকে এত ভালোবাসেন। তিনি নিজে সবসময় খেলাধুলার খবর নেন, নিজে টেলিভিশনে খেলাধুলা দেখেন। যখন সময় পান মাঠে চলে আসেন। এটা কিন্তু জন্মগতভাবে ওনার মধ্যে এসেছে। ওনার পরিবার খেলাধুলা জগতের মানুষ। এ ধরনের একটি কথা বলা, এটাকে কোনোভাবেই আমি মানতে পারছি না। এ ধরনের কথা এড়িয়ে চলা উচিত। বুঝতে হবে কোন কথাটি বলা উচিত। আমাদের মতো মানুষের কাছে অন্যরা শিখবে। আমরা এমন কোনো কথা বলবো না, যে কথা শুনে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, মনে কষ্ট পাবে।’
গত ৩ এপ্রিল বাফুফে সভাপতি সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে পাপনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘নাটক’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই বিষয়টি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে খুব অশোভনীয় লেগেছে, ‘কেন যেন উনি এ কথা বললেন, কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। এটাকে নাটক বলা বা কটাক্ষ করা কখনোই শোভনীয় নয়। খুবই অশোভনীয় হয়েছে। আরও কঠিন ভাষায় বলা যায় কিন্তু বলব না।’
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আশা করি তিনি মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হবেন।’ নারী ফুটবল দল অলিম্পিক বাছাইয়ে যেতে পারেনি এ নিয়ে সারা দেশেই তুমুল আলোচনা চলছে। এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে অবহিত করবেন জানিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে অবহিত করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের খেলায় অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করেন, সেটা ফুটবল হোক কিংবা ক্রিকেট। সেই নারীরা যখন অল্প কিছু টাকার জন্য খেলতে যেতে পারেনি, এটার পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কিছু আছে।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি নারী ফুটবল দলকে বিদেশে পাঠানোর ইচ্ছাই ছিল না তাদের (বাফুফের)। এই জন্যই এমন নাটক সাজিয়ে তাদের দোষটা আরেকজনের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
মিয়ানমারে গত ৬ এপ্রিল শুরু হয়েছে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই পর্বের ‘বি’ গ্রুপের খেলা। কিন্তু ২৯ মার্চ বাফুফে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় অর্থ সংকটের কারণে মিয়ানমারে দল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ২৭ মার্চ বাফুফে দল পাঠানোর জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাবর টাকা চেয়ে আবেদন করে। এভাবে এত তাড়াহুড়ো করে টাকা চাওয়ার ব্যাপারটিকে ‘নাটক’ বলে মনে হয়েছে মন্ত্রীর।
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নারী ফুটবল দলের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার জন্য যে প্রস্তাবনা তাঁরা দিয়েছিলেন, সেখানে আমাদেরও প্রাথমিকভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। বলেছেন, সরকার বা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়নি এ জন্য দল পাঠাতে পারেনি। তারা যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এ জন্য কখনোই আর্থিক সহযোগিতা এর আগে সেভাবে চায়নি। তারপরও আমরা ২৭ মার্চ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছি। কিন্তু সেখানে উল্লেখ ছিল ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের অবগত করানোর যে, তাদের ৯২ লাখ টাকা প্রয়োজন। অথচ এক দিন পরই তারা জানালেন যে টাকা পাচ্ছেন না বলে টিম পাঠাতে পারছে না। কীভাবে এটা হয়?’
শেষ মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেছে। কেন এত তড়িঘড়ি করে চিঠিটি দিলেন, কেন তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সময়ের আগে? এ ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে হলে নিশ্চয় তারা ৩ মাস বা ৬ মাস আগে জানতে পেরেছে। তারা এত দিন পরে জানালেন কেন? তারা যে অলিম্পিক বাছাইয়ে যেতে পারল না এটার মধ্যে কিছু একটা আছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’