যুক্তরাষ্ট্রকে ব্ল্যাটারের ‘পাল্টা আঘাত’

গত শুক্রবার ফিফা সভাপতি নির্বাচনের ঠিক আগে তোলপাড় পড়ে যায় ফুটবল-দুনিয়ায়। দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার সাত কর্মকর্তা। সুইস পুলিশ অভিযান চালায় জুরিখে ফিফার সদর দপ্তরে। তবে এত কিছুর পরও ফিফার সভাপতি পুননির্বাচিত হয়েছেন সেপ ব্ল্যাটার। পঞ্চমবারের মতো ‘ফুটবল-অধীশ্বরে’র আসনে বসার পর পাল্টা আঘাত হেনেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিস্ময় প্রকাশ করে ব্ল্যাটারের অভিযোগ, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ না পেয়েই যুক্তরাষ্ট্র এসব ‘কাণ্ড’ করছে।
২০১৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে রাশিয়া। আর ২০২২ বিশ্বকাপ হবে কাতারে। কোনোটাই মার্কিনিদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়। ইউক্রেন সংকটের সময় রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ। কাতারের ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পেছনে ‘অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে’র অভিযোগ তো অনেক দিন ধরেই ফুটবল-বিশ্বে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে ব্ল্যাটারের মতে, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এসব কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। সুইজারল্যান্ডের টেলিভিশন চ্যানেল আরটিএসকে তিনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু বিষয় বুঝতে ভুল হয় না। আমেরিকা ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রার্থী ছিল। কিন্তু তারা হেরে যায়। আমি ঠিক নিশ্চিত নই। কিন্তু এটা ঠিক যে একটা রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
১৯৯৮ সাল থেকে ফুটবলের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পদ ব্ল্যাটারের দখলে। এবারের নির্বাচনের আগে অবশ্য কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশ প্রকাশ্যেই ব্ল্যাটারের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তাঁকে হারানো যায়নি। প্রথম দফা ভোটের পর লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জর্ডানের প্রিন্স আলী বিন আল হুসেইন।
প্রিন্স আলীকে জেতানোর জন্যও যুক্তরাষ্ট্র ‘কলকাঠি নেড়েছিল’ বলে অভিযোগ ব্ল্যাটারের। ফিফার বিরুদ্ধে ওঠা কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘অবশ্যই আমি মর্মাহত হয়েছি। ফিফার সভাপতি হিসেবে অন্য কোনো সংগঠন সম্পর্কে ভালোমতো না জেনে আমি কিছুতেই কোনো মন্তব্য করতে পারতাম না।’
প্রায় ১৫ কোটি ডলার লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগে ফিফার ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে সাতজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে আছেন দুজন সহসভাপতিও। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিফার একাধিক স্পন্সর। দুর্নীতির অভিযোগে ফিফা যে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভিসা, কোকাকোলার মতো কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের আশ্বস্ত করে ব্ল্যাটার বলেছেন, ‘আমরা গত সপ্তাহেই স্পন্সরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের চিঠি আদান-প্রদানও হয়েছে। ফিফার সুনাম ফিরিয়ে আনতে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেব আমরা।’
ব্ল্যাটারের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনাগুলো সত্য প্রমাণিত হলেও তাতে ফিফা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এসবের সঙ্গে যে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, সে কথাও বলেছেন জোরের সঙ্গে।