বাংলাদেশের ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’র সুযোগ

চার বছর আগের এশিয়া কাপের দুঃখ আজও তাড়া করে বেড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠে পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানে হারের যন্ত্রণা কোনোদিনই ভোলা সম্ভব নয় হয়তো। তবে এবার সেই দুঃখের ক্ষতে প্রলেপ বোলানোর সুযোগ। রোববারের ফাইনালে জিতলে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপার উচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে বাংলাদেশ। রচিত হবে আরেকটি ‘প্রথম’। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের মধুর স্বাদ পাবে লাল-সবুজের দল।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সমীহজাগানো শক্তিতে পরিণত হলেও এবারের এশিয়া কাপের আগে টি-টোয়েন্টিতে তেমন সাফল্য ছিল না বাংলাদেশের। ৫০টি ম্যাচ খেলে মাত্র ১৫টি জয় পেয়েছিল। সেই ১৫টি জয়ের সাতটিই ছিল আইসিসির সহযোগী সদস্যগুলোর বিপক্ষে। বাকি আট জয়ের পাঁচটিতেই প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। পাকিস্তানকে হারিয়েছিল মাত্র একবার, গত এপ্রিলে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর।
শ্রীলঙ্কাকে এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর ভারত এখনো অজেয় ২০ ওভারের ক্রিকেটে। রোববার মিরপুর স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের বিজয়নিশান উড়লে এক ঢিলে দুই পাখি মারা পড়বে। বাংলাদেশের এশিয়া কাপ জয় আর ভারত-বধ।
টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তিনবার ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। একটি তো এবারের এশিয়া কাপেই। অন্য দুটিও কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে নয়, বিশ্বকাপে।
২০০৯ সালে প্রথম দেখায় কিছুটা লড়াই করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সে বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল লাল-সবুজের দল। নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে ভারতের ছুড়ে দেওয়া ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জ ভালোই মোকাবিলা করেছিল বাংলাদেশ। তবে ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিক (২২ বলে ৪১) আর শেষ দিকে নামা নাঈম ইসলামের (১৭ বলে ২৮) দুটো লড়াকু ইনিংসের পরও হার মানতে হয়েছিল ২৫ রানে।
২০১৪ বিশ্বকাপে আবার ভারতের সঙ্গে লড়াই। সেবার স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশই। তবে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ একদমই ভালো কাটেনি মুশফিকুর রহিমের দলের। বাছাইপর্বে আফগানিস্তান আর নেপালকে হারালেও হেরে গিয়েছিল হংকংয়ের কাছে। এরপর মূলপর্বের চারটি ম্যাচের সবগুলোতেই বড় ব্যবধানে হেরেছিল স্বাগতিকরা।
২৮ মার্চ মিরপুর স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার এনামুল হক (৪৩ বলে ৪৪), অধিনায়ক মুশফিক (২১ বলে ২৪) আর সাত নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহর (২৩ বলে অপরাজিত ৩৩) তিনটি ভালো ইনিংস ১৩৮ রান এনে দিয়েছিল। তবে ভারতকে জিততে বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়তে হয়নি। রোহিত শর্মা (৫৬) আর বিরাট কোহলির (অপরাজিত ৫৭) অর্ধশতক আট উইকেটের সহজ জয় এনে দিয়েছিল ‘টিম ইন্ডিয়া’কে।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সঙ্গে তৃতীয় লড়াইয়ের স্মৃতি এখনো টাটকা। মিরপুরেই এবারের এশিয়া কাপের মূলপর্বের প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হার মেনেছিল বাংলাদেশ। ৫৫ বলে ৮৩ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে ভারতের জয়ের নায়ক সেই রোহিত শর্মা। তবে সেদিন তিনি ব্যক্তিগত ২১ রানে সাকিবের হাতে ‘জীবন’ না পেলে ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত।
উদ্বোধনী ম্যাচের মতো ফাইনালের দুই দল অভিন্ন। আগের ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে বাংলাদেশ এবার জয় পেতে মরিয়া। আর জিতলেই ইতিহাস। এশিয়া কাপের শিরোপা তো ঘরে আসবেই, টি-টোয়েন্টিতে ভারত-বধের লক্ষ্যপূরণও হয়ে যাবে।