যে সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়েছিল মেসিকে

আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের সেই ছোট্টো বালক, যাকে পেতে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা টিস্যু পেপারে সাইন করেছিল। সেটি বিফলে যায়নি। ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সবকিছু। তবু মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনায় উৎসব হতো না। ক্লাবের হয়ে সর্বজয়ী মেসি যে দেশের হয়ে ছিলেন সর্বহারা। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হার। ২০১৫ কোপা আমেরিকা ফাইনালে চিলির কাছে হার। ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালেও অভিন্ন প্রতিপক্ষের কাছে হারের বেদনায় নীল হওয়া।
এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন মেসি, অবসর নিয়ে নেন জাতীয় দল থেকে। অভিমান ভেঙে ফিরে আসেন ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। কিন্তু বিশ্বকাপের মূল পর্বে ফ্রান্সের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বাদ। মেসি তবু থেমে থাকেননি। ২০২১ সালে ক্লাবের মেসি খানিকটা হলেও জাতীয় দলের মেসি হলেন। আর্জেন্টিনা জিতল কোপা আমেরিকা। ফুটবল বিধাতা তার অভিমানী শিষ্যের জন্য আরও বড় কিছু রেখেছিলেন। পরের বছর ২০২২ সালে বিশ্বকাপটাই তুলে দিলেন মেসির হাতে। এবার মেসি পুরোপুরি দেশের। এই মেসি সর্বজয়ী।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল রোববার (১৮ জুন)। সেই উপলক্ষে অ্যাডিডাস একটি মিনি ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। ‘হাই ইন দ্য স্কাই’— শিরোনামের সেই ডকুমেন্টারিতে মেসির পাশাপাশি কথা বলেছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, পাওলো দিবালা, ম্যাক অ্যালিস্টার, রদ্রিগো ডি পল।
ডকুমেন্টারিতে মেসি বলেন, ‘আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক সম্মানের। এটা এমন কিছু যা আমি অনেক যত্নের সঙ্গে করেছি। যদিও আমাকে অনেক খারাপ সময়ও অতিক্রম করতে হয়েছে। এমনকি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশের হয়ে আর খেলব না। আমার মনে বেশ শঙ্কা কাজ করছিল। অবশ্য, সিদ্ধান্ত বদলানোতে আমি ভীষণ খুশি।’
সিদ্ধান্ত বদলে ফিরে এসেছিলেন মেসি। যেন ছাঁইয়ের গাদা থেকে ফিনিক্স পাখির পুনর্জন্ম হয়েছিল। ফিরে এসে যে পেয়েছেন আরাধ্য বিশ্বকাপ। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মেসি বললেন, ‘জাতীয় দলে ফিরে আসা এবং সবকিছু জেতা, এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কখনও হার না মানার মানসিকতা রাখা।’
এই বিশ্বাস আর নিজের সামর্থ্যে ভর দিয়ে মেসি নেতা হয়ে উঠেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন এক দলকে, যারা তার জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছে। তারা জানত, ক্ষুদে জাদুকরের পায়ের জাদু এবার বিফলে যাবে না। তাদের বিশ্বাস রেখেছেন মেসি। সেই বিশ্বাস আর সামর্থ্যের ডানায় চেপেই তো আকাশে উড়ছে আলবিসেলেস্তেরা।