আফগান রূপকথায় রঙিন বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপ শুরুর আগে আপনাকে যদি বলা হত, আফগানিস্তান এবার সেমি ফাইনাল খেলবে—নির্ঘাৎ পাগল ভাবতেন। আচ্ছা, সে আলাপ বাদ দেই। যদি বলা হত, আফগানরা সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারাবে। তাহলে? ওই যে, পাগলের প্রলাপই ভাবতেন। আফগানরা সেমিতে উঠতে পারেনি। তিন চ্যাম্পিয়নকে ঠিকই হারিয়েছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারানোর পর অঘটন বলে যারা উড়িয়ে দিয়েছিল, সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তাদের চুপ করিয়েছে।
ধান ভানতে শিবের গীতের মতো ক্রিকেটের মাঝে একটু ফুটবলের আলাপ আনি। ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল পর্তুগাল। সেবার লিসবনে বড় পর্দায় খেলা দেখা এক দর্শক চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, আমাদের কিছু নেই। রোনালদো আছেন। পর্তুগালের একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আছেন। ক্রিকেটে কেন হঠাৎ সাত বছর পুরোনো কথা নিয়ে আসা? কারণ, আফগান ক্রিকেট। আফগানিস্তান দেশটা নিয়ে কারও অজানা নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশটির আনন্দের অন্যতম উপলক্ষ বাইশ গজের এই সবুজ ময়দান। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা বহুবারই বলেছেন, আমাদের একমাত্র ক্রিকেটটাই আছে।
ক্রিকেটকে আগলে ধরেই তারা এগিয়ে চলেছেন। এবারের বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে আফগানরা পেয়েছিল ৬৯ রানের জয়। তাদের করা ২৮৪ রানের জবাবে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সে ম্যাচে আট উইকেট নিয়েছিলেন আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান মিলে। পাকিস্তানকে হারানো ম্যাচে আবার এর উল্টো চিত্র। ২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতে আট উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। পুরো ম্যাচে পাকিস্তানি বোলারদের হতাশা ছাড়া কিছুই দেয়নি আফগান টপঅর্ডার। নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় পায় সেই ম্যাচটিতে। জয়ের পর গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার প্রশংসার জোয়ারে আনন্দের ঢেউয়ে ভেসে যায় আফগানিস্তান।
আগের দুটি বিশ্বকাপ মিলিয়ে যাদের জয় ছিল একটি, এবার এক আসরে পেয়েছে চার জয়। আফগানিস্তান দেখিয়েছে সুদৃঢ় মানসিকতার দুর্দান্ত প্রদর্শনী। আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদি দল নিয়ে গর্ব করেই বলেছিলেন, ‘আমাদের দলটা একদিনে তৈরি হয়নি। গত দুবছর ধরে আমরা একসঙ্গে খেলছি। নিজেদের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করছি। কিছু ম্যাচ হেরেছি, কিছু ম্যাচ জিতেছি। কঠিন পরিশ্রম করেছে সবাই। আগামীতেও ভালো খেলাটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।’
শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে তৈরি করেছিল সেমি ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিও প্রায় জিতেই নিয়েছিল আফগানরা। ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের কাছে নত না হলে আরেকটি রূপকথা দেখত ক্রিকেটবিশ্ব। তা হয়নি। তাতে অবশ্য ম্লান হয়নি আফগান রূপকথার একটি পাতাও। প্রতিটি শট যেন একেকটি শব্দ, প্রতিটি উইকেট যেন একেকটি উপমা হয়ে নিপুণ হাতে বুনেছে রূপকথা।