দুর্দান্ত লড়েও হেরে গেল বাংলাদেশ

চেষ্টার কমতি ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটাদের। শেষ বল পর্যন্ত লড়েছেন তারা। তবে বিধি ছিল বাম। চার বলে ১০ রান বাকি থাকতে জাকের আলীর উইকেটের পতন হলে খেলা ঘুরে যায়। তবে, জেতার দুর্দান্ত পণ নিয়ে শ্রীলঙ্কার চোখে চোখ রেখে শেষ অবধি লড়েও হেরে গেল বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ-জাকেররা নিজেদের উজাড় করে দিলেও বল হাতে আগেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। যার খেসারত দিতে হয়েছে স্বাগতিকদের। বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ২০৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। বিশাল সংগ্রহের পিছু ছুটে বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ঘরের মাঠে লঙ্কানদের কাছে তিন রানে হারে বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ সোমবার (৪ মার্চ) আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২০৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ২০ ওভারে আট উইকেটে বাংলাদেশ থামে ২০৩ রানে।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনার লিটন দাসের কাছে প্রত্যাশা ছিল ভালো শুরু এনে দেওয়ার। কিন্তু, রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। প্রথম ওভারেই ম্যাথুসের বলে কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন লিটন। তিন বলে শূন্য রানে ফেরেন। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও পারেননি চাপ সামাল দিতে। ১১ বলে ১২ রান করে বিনুরা ফার্নান্দোর বলে লঙ্কা অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। ২১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তাওহিদ হৃদয়ের ওপর চোখ ছিল সবার। সেই ফর্ম টেনে আনতে পারলেন না ম্যাচে। তাকেও ফেরান ম্যাথুস, ক্যাচ নেন কুশল। ৩০ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশের প্রথম পওয়ার প্লে কেটেছে ভয়াবহ।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে এলোমেলো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ৩০ রানে তিন উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ। শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন তিনি। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। তার আগ্রাসনের বিপরীতে শান্ত ছিলেন মন্থর। ২২ বলে ২০ রান করে মাথিশা পাথিরানার শর্ট বল ওপরে সোজা ব্যাটে ওপরে তুলে দেন শান্ত।
শান্তর সহজ ক্যাচ লুফে নিতে কষ্ট হয়নি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের। ৬৮ রানে পতন হয় বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের। শান্ত ফিরে গেলে অভিষিক্ত জাকের আলী অনিককে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে রানের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ২৭ বলে পূর্ণ করেন অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে দুই চার ও চারটি ছক্কায় ৫৪ রান করেন তিনি। থিকসানার বলে লং অনে ফার্নান্দোর তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর চেষ্টার কমতি রাখেননি জাকের ও শেখ মেহেদি। ১১ বলে ১৬ রান করে ফার্নান্দোর বলে শর্ট লেগে ম্যাথুসের ক্যাচ হয়ে ফেরেন মেহেদি। তবে, অভিষেক ম্যাচে অর্ধশতক তুলে নেন জাকের। পাথিরানাকে চার মেরে মাত্র ২৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছান জাকের। জাকের যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, বাংলাদেশের আশার বাতিঘর হয়ে ছিলেন। কিন্তু, তাকে থামিয়ে ম্যাচ নিজেদের দিকে টেনে নেয় লঙ্কানরা। শেষ ওভারে দাসুন শানাকার বলে লং অফে আসালাঙ্কার ক্যাচে পরিণত হন জাকের। ফেরার আগে ৩৪ বলে চারটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন জাকের। তবে, দলকে জেতাতে পারলেন না শেষ পর্যন্ত। লঙ্কানদের পক্ষে শানাকা, ম্যাথুস ও ফার্নান্দো পান দুটি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। শরিফুল ইসলামের করা প্রথম বলেই চার মারেন অভিষেক ফার্নান্দো। দ্বিতীয় বলে তাকে তুলে নেন বাঁহাতি এই পেসার। ফার্নান্দোকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেনে শরিফুল। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপদ সামাল দেন কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস। ৩৭ রানে কামিন্দুকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৪ বলে ১৯ রান করেন কামিন্দু।
এরপর বাংলাদেশকে হতাশার তিক্ততা দেন কুশল ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দুজনের ৯৬ রানের জুটিতে খেই হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। ৩৬ বলে ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কায় ৫৯ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন কুশল। তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। রিশাদের লেগ স্পিনে কাত হয়ে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন কুশল। আরেকপ্রান্ত আগলে রেখে অর্ধশতক তুলে নেন সামারাবিক্রমা। ৪৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করা সামারাবিক্রমা অপরাজিত থাকেন ৪৮ বলে আট চার ও এক ছয়ে ৬১ রানে।
তাকে সঙ্গ দেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ২১ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ইনিংসে কোনো চারের মার ছিল না, হাঁকিয়েছেন ছয়টি ছক্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট পান শরিফুল, তাসকিন ও রিশাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ২০৬/৩ (ফার্নান্দো ৪, কুশল ৫৯, কামিন্দু ১৯, সামারাবিক্রমা ৬১* , আসালাঙ্কা ৪৪*; শরিফুল ৪-০-৪৯-১ , তাসকিন ৪-০-৪০-১, শেখ মেহেদি ৩-০-৩০-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪২-০ , রিশাদ ৪-০-৩২-১, সৌম্য ১-০-৮-০)।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ২০৩/৮ (লিটন ০, সৌম্য ১২, শান্ত ২০, হৃদয় ৮, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, জাকের ৬৮, মেহেদি ১৬, রিশাদ ০, তাসকিন ২*, শরিফুল ৪*; ম্যাথুস ৩-০-১৭-২, ফার্নান্দো ৪-০-৪১-২, থিকসানা ৪-০-৩২-১, শানাকা ৩-০-৩৬-২, ধনঞ্জয়া ২-০-১৯-০, পাথিরানা ৪-০-৫৬-১)
ফল : শ্রীলঙ্কা তিন রানে জয়ী