ক্রিকেটার থেকে আইসিসির এলিট প্যানেলে, সৈকতের যাত্রাপথের গল্প
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/03/29/434196532_1548672165977310_4783143713872267168_n.jpg)
আম্পায়ারিং এমন এক পেশা, যেখানে চাকচিক্য নেই। নেই খুব বেশি পরিচিতি। ভালো করলে কেউই মনে রাখবে না। পান থেকে চুন খসলেই সবার নিন্দা শুরু। এই পেশায় যারা আসেন, তারা জানেন ভুলের সুযোগ একদমই নেই। বাংলাদেশ থেকে আম্পায়ারিং করাটা তো আরও কঠিন। সেই কঠিনকে ভালোবেসেছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত।
আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত। নারী ও পুরুষদের বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করেছেন, প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে পুরুষ ক্রিকেটে শতাধিক ম্যাচ পরিচালনা করার অনন্য কীর্তি গড়েছেন তিনি।
ঢাকায় ১৯৭৬ সালের ১৬ অক্টোবর শরফুদ্দৌল্লা সৈকতের জন্ম। মাধ্যমিকের পড়াশোনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে। উচ্চমাধ্যমিক রাজশাহী কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এমবিএ করেন।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/03/29/2.jpg)
খেলোয়াড়ি জীবনে সৈকত ছিলেন বামহাতি স্পিনার। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ১৯৯২ সালে অভিষেক। তখন সবে এসএসসি শেষ করেছেন তিনি। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে তিনটি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন সৈকত। জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে অল্প বয়সেই। পরবর্তীতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্বও পান তিনি। তবে, খুব বেশিদিন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি সৈকত।
দেশের জার্সিতে খুব একটা ভালো অভিজ্ঞতা না থাকলেও সৈকত দীর্ঘদিন খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সূর্যতরুণ ক্লাবের হয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক। সূর্যতরুণ, ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে খেলেছেন বিভিন্ন দলের হয়ে। ২০০০-০১ মৌসুমে তৎকালীন ঢাকা মেট্টোপলিসের হয়ে ১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেন।
ব্যাকপেইনের ফলে খেলা ছাড়তে হয় তাকে। তবে, তিনি চেয়েছিলেন খেলার সঙ্গেই থাকতে। শুরু করেন আম্পায়ারিং। সেটিই একসময় পরিণত হয় নেশা ও পেশায়। ২০০৬ সালে আইসিসির তালিকাভুক্ত আম্পায়ার হন তিনি। পরের বছর ২০০৭ সালে বরিশাল ও সিলেট বিভাগের একটি ম্যাচে প্রথমবার আম্পায়ার হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করেন। ২০১০ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ ছিল তার ক্যারিয়ার।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/03/29/3.jpg 687w)
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে অভিষিক্ত হন সৈকত। সেই থেকে শুরু। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে (পুরুষ ও নারী ক্রিকেট মিলিয়ে) ১০টি টেস্ট, ৭৬টি ওয়ানডে এবং ৭২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন সৈকত। এর বাইরে থার্ড আম্পায়ার, ফোর্থ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এবার নিজেকে আরও বড় পরিসরে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ৪৭ বছর বয়সী সৈকত। আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে তাকে যুক্ত করেছে আইসিসি। প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে এমন কীর্তি গড়লেন তিনি। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে বিষয়টি।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/03/29/4.jpg 687w)
সৈকতের মতে, ‘ভিন্ন দুই দলের খেলা পরিচালনা করার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের ম্যাচ পরিচালনা করা। আমরা ক্রিকেটপ্রেমী জাতি। আমি নিজেও ক্রিকেটের মানুষ। সবসময় চাই দেশ জিতুক। কিন্তু, মাঠে আমাদের নিরপেক্ষ থাকতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেল। অনেকেই সেটি সহজভাবে নিতে পারে না। এমন অনেক দিন গেছে ম্যাচ পরিচালনার পর দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছি। আম্পায়ারদের ক্ষেত্রে এটা প্রায়ই ঘটে।’
সৈকতই একমাত্র বাংলাদেশি আম্পায়ার, যিনি পুরুষ ও নারী দুটি বিশ্বকাপেই দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছিলেন সৈকত। তার মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলগুলোর ম্যাচ। পাশাপাশি তিনটি ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ার এবং আরও তিনটি ম্যাচে টেলিভিশন আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সৈকত আম্পায়ারিং করেছিলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে।