তিন দিনে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সিরিজে সমতা বাংলাদেশের

জিম্বাবুয়ের বোলাররা ব্যাট হাতে চেষ্টা করেছেন উইকেট বাঁচাতে। বাংলাদেশের পুরো ১১ জন ঘিরে ধরেছিল তাদের। দিনের নির্ধারিত ওভার শেষে মাঠের আম্পায়াররা খেলা আরেকটু চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাপারটা স্পষ্ট, যদি ফল বের হয়। জিম্বাবুয়ের বাকি থাকা উইকেটটি যদি ফেলতে পারে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের জেতার সম্ভাবনা আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। তাইজুল ইসলামের বলে ডিরেক্ট হিটে ভিনসেন্ট মাসেকেসার উইকেট ভেঙে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতেই শেষ হয় জিম্বাবুয়ের দশম ব্যাটারও। তিন দিনেই শেষ হওয়া টেস্টে বাংলাদেশ পায় ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় জয়। এতে ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ৪৬.২ ওভারে ১১১ রানে। প্রথম ইনিংসে তারা অলআউট হয়েছিল ২২৭ রানে। আর এক ইনিংসে ব্যাট করে বাংলাদেশ তুলেছিল ৪৪৪ রান।
ঘরের মাঠে সর্বশেষ ৬ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটেও মানতে হয়েছে হার। চারদিকে যখন গেল গেল রব, বাংলাদেশ তখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে পাত্তাই দেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
২১৭ রানের লিড নিয়ে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ব্যর্থ জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি। ৮ রানেই ভাঙে সেটি। তাইজুল ইসলামের বলে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রায়ান বেনেট। ৬ রান আসে বেনেটের ব্যাট থেকে। একই ওভারে তাইজুল লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন নিক ওয়েলচকে। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
সেই যে শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল, তা থামতে দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল যে ঝড় শুরু করেন, তা টেনে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টানা তৃতীয় ইনিংসে ফাইফারের স্বাদ নেন তিনি। ২১ ওভার বল করে ৩২ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। যাতে ছিল বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে ওঠা বেন কারান। ১০৩ বলে ৪৬ রান করা কারানকে উইকেটের পেছনে জাকের আলীর ক্যাচ বানান মিরাজ। কারান বিদায় নিলে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার।
মিরাজের ৫ উইকেটের পাশাপাশি ৪২ রান খরচায় ৩ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল। নাঈম হাসান নিয়েছেন ১টি।
এর আগে, ব্যাট হাতে ভরাডুবির নিত্য গল্প দেখে সবাই যখন চূড়ান্ত হতাশ, তখনই জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে বাংলাদেশ পেয়েছে জোড়া সেঞ্চুরির দেখা।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে আজ বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল ৭ উউকেটে ২৯১ রান নিয়ে। মিরাজকে ভালো সঙ্গ দেওয়া তাইজুল ইসলাম বিদায় নেন দলীয় ৩৪২ রানে। ভিনসেন্ট মাসেকেসার বলে তাফাজওয়া সিগার স্ট্যাম্পিংয়ে পরিণত হন ২০ রান করা তাইজুল। ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। এরপর আসেন তানজিম সাকিব। তাকে নিয়ে মিরাজ গড়েন ৯৬ রানের জুটি। মাদেভিরের শিকার হওয়ার আগে ৮০ বলে ২টি চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন সাকিব।
শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিরাজ তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। মাসেকেসার বলে আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেছেন ১৬২ বলে ১১টি চার ও ১ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ার সেরা।
দীর্ঘদিন পর ওপেনাররা হাসি ফুটিয়েছেন মুখে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় মিলে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ১১৮ রান। মধ্যাহ্ন বিরতির পর এনামুল হক বিজয়ের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে লেগ বিফোর হওয়ার আগে বিজয়ের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। প্রায় তিন বছর পর টেস্টে ফেরা বিজয়ের এটি বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের সর্বোচ্চ।
বিজয়কে হারালেও মুমিনুল হককে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সাদমান। দ্বিতীয় উইকেটে আসে ৭৬ রান। বেন কারানের ক্যাচ বানিয়ে মুমিনুলকে ফেরান ওয়েলিংটন মাসাকাজদা। মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। পরের ওভারের প্রথম বলে সাদমানকে লেগ বিফোরে ফাঁদে ফেলেন ব্রায়ান বেনেট। আউট হওয়ার আগে ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রান করেন সাদমান। টেস্টে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২৩ রানে নিক ওয়েলচকে ক্যাচ দেন ভিনসেন্ট মাসেকেসার বলে। ২৫৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেট দ্রুতই হারিয়েছে স্বাগতিকরা। মাসেকেসাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫ রানেই সমাপ্ত হয় জাকের আলী অনিকের ইনিংস। ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে ফেরে জিম্বাবুয়ে। রানে ফেরা মুশফিকুর কাটা পড়েন রান আউটের দুর্ভাগ্যে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার করেন ৪০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ২২৭/১০
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৪৪/১০
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : ৪৬.২ ওভারে ১১১/১০ (বেনেট ৬, কারান ৪৬, ওয়েলচ ০, উইলিয়ামস ৭, আরভিন ২৫, মাদেভিরে ০, সিগা ০, মাসাকাদজা ১০, এনগারাভা ৫, মাসেকেসা ২, মুজারাবানি ৭*; তাইজুল ১৬.২-৩-৪২-৩, হাসান ২-২-০-০, মিরাজ ২১-৮-৩২-৫, নাঈম ৭-১-৩৪-১)
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী।
সিরিজ : ১-১ সমতা।