হ্যাটট্রিককন্যা শান্তির গ্রামে আনন্দের বন্যা

ভুটানের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে ৪-১ গোলের দুর্দান্ত জয় এনে দিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কন্যা শান্তি মার্ডি। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে গোটা দেশ যেমন মুগ্ধ, তেমনি আনন্দে আত্মহারা তার গ্রাম।
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামা শান্তি একাই তিনটি গোল করে ম্যাচের নায়িকা বনে যান। এ খবরে দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামে শুরু হয় উল্লাস-আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, নাচ-গানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। শান্তির জীর্ণ কুটিরে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের আনন্দ।
প্রতিভা, সংগ্রাম ও স্বপ্নের প্রতীক এই কিশোরী সমাজের পিছিয়ে পড়া সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়েও কঠিন বাস্তবতা ও দারিদ্র্য জয় করে পৌঁছেছেন জাতীয় পর্যায়ে। তার বাবা বাবুলাল মার্ডি একজন কৃষিশ্রমিক। মা সুকুমনি মুরমু গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে শান্তি দ্বিতীয়। তিনি বর্তমানে দক্ষিণ পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল শান্তির আকর্ষণ। গ্রামের মাঠ থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালে আন্তঃপ্রাথমিক নারী ফুটবলে উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার ফুটবল যাত্রা শুরু। পরে বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুলের অধীনে প্রশিক্ষণে তার ক্যারিয়ার গতি পায়।
শান্তির বাবা বাবুলাল বলেন, আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা গর্বিত। তবে বাড়িতে টিভি না থাকায় খেলা দেখতে পারিনি- এটাই কষ্ট দিয়েছে।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক নাজিরুল ইসলাম বলেন, শান্তি এখন কেবল একজন ফুটবলার নয়, সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে জাতীয় নারী ফুটবলে অনেক দূর যাবে।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, শান্তির সাফল্য আমাদের গর্ব। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, সে যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বড় কিছু অর্জন করতে পারে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য শান্তি মার্ডির এই হ্যাটট্রিক নিঃসন্দেহে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক সুযোগ পেলে গ্রামের মেয়ে হয়েও যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম করা যায়- শান্তি তার অনন্য উদাহরণ।