পৃথিবীতে ফিরলেন মহাকাশে ভেসে বেড়ানো ৬ নারী
মহাকাশ ভ্রমণের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পপতারকা কেটি পেরিসহ আরও পাঁচজন নারী। বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিনের একটি রকেটে চড়ে তারা সফলভাবে মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। ১৯৬৩ সালের পর এই প্রথমবার কোনো মহাকাশ অভিযানে কেবল নারীরা অংশগ্রহণ করলেন। খবর রয়টার্সের।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় (বাংলাদেশের সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩১) মিনিটে ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেটটি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসের লঞ্চপ্যাড থেকে যাত্রা শুরু করে। রকেটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় পৌঁছে। এ সময় নভোচারীরা কয়েক মিনিটের জন্য ভরশূন্য অনুভব করেন। প্রায় ১১ মিনিটের এই ঐতিহাসিক যাত্রা সরাসরি সম্প্রচার করে ব্লু অরিজিন। এই উড্ডয়নটি মূলত মহাকাশ পর্যটনের উদ্দেশ্যে নির্মিত ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড লঞ্চ ভেহিকেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ও সাফল্য অর্জন।
ছয়জন নারীর এই ব্যতিক্রমী দলে ছিলেন জেফ বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, জনপ্রিয় সিবিএস উপস্থাপক গেইল কিং, নাসার সাবেক রকেট বিজ্ঞানী আইশা বো, বিজ্ঞানী আমান্ডা নুয়েন, চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান ফ্লিন ও বিশ্বখ্যাত পপতারকা কেটি পেরি।

নভোচারীরা জানান, মহাকাশে তারা যখন ভরশূন্যতা অনুভব করছিলেন, তখন কেটি পেরি বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লুই আর্মস্ট্রংয়ের কালজয়ী গান ‘হোয়াট এ ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড’ গেয়ে ওঠেন।
পৃথিবীতে নিরাপদে অবতরণের পর কেটি পেরি তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ভালোবাসার সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ অনুভব করছি।’
অবতরণের সময় পেরির হাতে একটি ডেইজি ফুল দেখা যায়, যা তিনি তার মেয়ে ডেইজির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে মহাকাশে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করার জন্য লঞ্চপ্যাডে উপস্থিত ছিলেন একঝাঁক তারকা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গেইল কিংয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও জনপ্রিয় উপস্থাপক ওপরা উইনফ্রে, ক্রিস জেনার ও খোলো কার্দাশিয়ান। প্রত্যেকেই এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
১৯৬৩ সালে সোভিয়েত মহাকাশচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভার প্রায় তিন দিনের একক মহাকাশ ভ্রমণের পর এই প্রথমবার কোনো শুধু নারীদের অংশগ্রহণে মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন হলো।
ব্লু অরিজিন মহাকাশ ভ্রমণের প্রতি আসনের নির্দিষ্ট মূল্য প্রকাশ না করলেও তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, আগ্রহী যাত্রীদের আসন বুকিংয়ের জন্য দেড় লাখ ডলার ফেরতযোগ্য জামানত দিতে হয়। ২০২১ সালে সংস্থাটি জানিয়েছিল, একটি আসনের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২০২১ সালে ‘স্টার ট্রেক’ খ্যাত অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনার বিনামূল্যে অতিথি হিসেবে ব্লু অরিজিনের মহাকাশ ভ্রমণ করেন।
২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে প্রতি ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে কমপক্ষে দুই লাখ ডলার চার্জ করার পরিকল্পনা করেছিল।
ব্লু অরিজিন জানিয়েছে, মহাকাশে ভ্রমণের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তারা পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে।

ব্রিটেনের ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের স্ট্র্যাটেজি ও অর্গানাইজেশন বিষয়ক অধ্যাপক লইজোস হেরাক্লিয়াস মনে করেন, নিউ শেফার্ডের প্রতিটি উৎক্ষেপণের খরচ এক থেকে তিন মিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ছয়টি আসন রয়েছে ফলে এই ব্যবসাকে আর্থিকভাবে টেকসই করতে হলে প্রতিজন যাত্রীর গড় খরচ প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ডলার হতে হবে। তাই সাধারণ মানুষের জন্য এটি সহজলভ্য হতে এখনও অনেক সময় লাগবে।’