মহাকাশে অবস্থান ধরে রাখতে ইউরোপ ও ভারতের চেষ্টা

মহাকাশে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার দৌড়ে এখনো এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। তবে জার্মানি এবং ভারতও এগিয়ে আসছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট ও কার্গো প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা তাদের।
মহাকাশে শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখার দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এরইমধ্যে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ। এদিকে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে মহাকাশে শক্ত অবস্থানে নিজেদের হাজির করার চেষ্টা করছে৷
জার্মানির অটমোস স্পেস কোম্পানিতে দেখা গেল, নিবিষ্ট মনে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা চালাচ্ছেন। যদিও এটি একটি সিমুলেশন। প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্টিয়ান এবং তার দল কয়েক বছরের চেষ্টায় স্পেস ক্যাপসুলের ডিজাইন করেছেন। ক্যাপসুলটি কার্গো নিয়ে কক্ষপথে যেতে এবং আসতে পারবে।
অটমোস স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্টিয়ান ক্লাউস বললেন,‘শুধু আমরাই এধরণের জিনিস তৈরি করছি বা গবেষণা করছি, বিষয়টি এমন নয়। তবে আমরা এটি সম্ভব করে তুলেছি। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথকে একটি শিল্পপার্ক হিসেবে ভাবুন। আমরা হলাম তাদের পরিবহন কোম্পানি যারা এই শিল্পপার্কের জিনিসপত্র পরিবহন করে। অর্থাৎ মহাকাশের লজিস্টিকস স্পেশালিস্ট।’
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আবার প্রবেশ করা খুব দুরূহ একটি কাজ। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তরে বিষয়টি বার বার অনুশীলন করা হয়। সপ্তমবারের চেষ্টায় সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক করা গেছে।
সেবাস্টিয়ান ক্লাউস জানালেন, ‘‘আমি সত্যিই আমার দলের সদস্যদের নিয়ে গর্বিত৷ তবে বার বার অনুশীলন করা খুব জরুরি। সত্যিকারের মিশনে অনেক বিষয় প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্নভাবে ঘটে। কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কোনো বিমান বা উড়োজাহাজ হঠাৎ ল্যান্ডিং জোনে ঢুকে যেতে পারে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এদিকে দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদের একটি ওয়ার্কশপে গবেষকেরা ভবিষ্যতের জন্য একটি রকেট তৈরি করছেন। ২৪ বছরের জয়নুল আবেদিন আবিওম প্রতিষ্ঠা করেন। ছোটবেলা থেকেই রকেট বানানোর স্বপ্ন দেখতেন জয়নুল।
জয়নুল আবেদিন জানালেন, ‘১৯৬৩ সালে ভারত রকেটের ব্যবসায় প্রবেশ করে। কিন্তু রকেটগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য ছিল না। বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছিল যে, মহাকাশ কেন সবার জন্য হয়ে উঠছে না। আর তখন থেকেই মহাকাশে যেন কয়েকবার যেতে পারে এমন রকেট বানাতে আমার ভিশনের শুরু।’
নিজের দলটিকে নিয়ে ভারতের স্পেস ফ্লাইটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চান জয়নুল। শিক্ষার্থী হিসেবে ইন্ডিয়া স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। সরকার থেকে পাওয়া স্টার্টআপের ফান্ড, নিজের জমানো টাকা এবং বেসরকারি অর্থায়ন নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন তিনি। তার আবিষ্কার এরইমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কারও জিতেছে।
‘আমাদের পরের পদক্ষেপ হলো, ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত, সম্পূর্ণ কার্যকর এমন রকেট ইঞ্জিন তৈরি করা৷ এটি আমাদের পরবর্তী প্রধান লক্ষ্য। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এমন বাণিজ্যিক রকেট বানাতে চাই।’
মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। ইউরোপ এবং ভারতের মতো প্রতিযোগীরা চাইছে নিজেদের মজবুত অবস্থান তৈরি করতে৷ তবে বিনিয়োগ বাধা হয়ে ওঠে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।
অটমোস স্পেস প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্টিয়ান ক্লাউস বললেন, ‘গত বছর ১৫০টি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ চীন করেছে এর কাছাকাছি। আর আমরা ইউরোপীয়রা করেছি মাত্র তিনটি। এটি বিরাট ভারসাম্যহীনতা। আর অর্থায়নের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। ইউরোপের চেয়ে আমেরিকাতে পাঁচগুণ বেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পাওয়া যায়।’