ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি শতভাগ নির্ভুল নয়

কঠোর আইনি সুরক্ষা ছাড়া ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এছাড়া, এটি সম্পূর্ণ নির্ভুল ফল দিতে পারে না। বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে থাকেন।
আজকাল অনেক কাজে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিছু গাড়ি আছে, যেগুলো যাত্রীর মুখ স্ক্যান করে তার আসনের অবস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে দিতে পারে। আপনি ক্লান্ত বা বিভ্রান্ত হলে, আপনাকে সতর্কও করতে পারে। সফটওয়্যার আপনার চোখ, হাতের নড়াচড়া—এমনকি আপনি যখন হাই তোলেন সেটিও ট্র্যাক করে!
গ্রাহকদের শনাক্ত করতে ব্যাংকগুলো বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে। কিছু এটিএম এখন ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছে। শুনতে নিরাপদ মনে হলেও, কিছু স্ক্যামার ইতিমধ্যেই এই সুরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে পেয়েছে। শনাক্তকরণের জন্য বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহারের বিষয়টি বিতর্কিত—বিশেষ করে যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ডেটা ব্যবহার করতে পারে।
কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা যখন ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তখন আইনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শনাক্তকরণে ভুল, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অস্পষ্ট নিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাব—এসবই উদ্বেগের প্রধান বিষয়।
চীনা সরকার নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা রাখে। শিনজিয়াং প্রদেশে এসব তথ্য মূলত মুসলিম উইগুরদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়। নজরদারি ক্যামেরার এক বিশাল নেটওয়ার্ক মানুষের গতিবিধি ট্র্যাক করে।
ইতিমধ্যে জাতিসংঘ নজরদারি প্রযুক্তির এই ব্যবহারকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে অভিহিত করেছে।
তুরস্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের বডিক্যামে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা রিয়েলটাইমে ব্যক্তি শনাক্ত করতে পারেন। পরিচয় যাচাইয়ের কথা বলে প্রযুক্তিটির ব্যবহার শুরু হলেও, সমালোচকদের আশঙ্কা—এটি মূলত অধিকারকর্মীদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও তুরস্ক এবং ইইউ-এর আইন বলছে, এই ধরণের ‘সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য’ বিশেষ সুরক্ষার বিষয়। এর অর্থ হলো, এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশের একটি আইনি ভিত্তি—অথবা স্পষ্ট সম্মতি—থাকা প্রয়োজন। যদিও বিক্ষোভের সময় প্রায়ই তা মানা হয় না। এছাড়া, এই প্রযুক্তির নির্ভুলতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর সিভিল লিবার্টিজ-এর অ্যাডাম রেমপোর্ট বলেন, ‘যদি বিক্ষোভে ১০ বা ২০ হাজার মানুষ উপস্থিত হন, তাহলে অনেক ছবি তোলা হবে—কিছু লোকের মুখ আংশিকভাবে ঢাকা, এক জায়গায় অনেক মানুষ, অল্প আলো, কিংবা এলোমেলো অ্যাঙ্গেল থেকে ছবিগুলো তোলা হবে। সেক্ষেত্রে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনাক্তকরণে সমস্যা হতে পারে। তাই এটা খুবই সম্ভব যে ভুলের হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হবে, এবং যারা বিক্ষোভে ছিলেন না, তাদেরও জরিমানা করা হতে পারে।’
সারা বিশ্বের পুলিশ একই পদ্ধতি অনুসরণ করে: নজরদারি ফুটেজকে তারা ডাটাবেসে থাকা বায়োমেট্রিক ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে।
রেমপোর্ট আরও বলেন, ‘কোনো তদারকি ছাড়াই পুলিশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখের ছবি বিশ্লেষণের অনুরোধ করতে পারে। তারা ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা সম্ভাব্য পাঁচটি ফল দেখায়। এই পাঁচটির মধ্য থেকে পুলিশ একজনকে বেছে নেয়, যাকে তার খোঁজা ব্যক্তির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়।’
অর্থাৎ, সফটওয়্যার শুধু কিছু ছবি প্রস্তাব করতে পারে, এটি নির্ভুল ফল দেখাতে পারে না। একজন মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়—ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবিগুলোর কোনোটি ডাটাবেসের ছবির সঙ্গে মেলে কিনা। এটি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির একটি বড় দুর্বলতা।