এআই আসছে, চাকরির বাজার বদলাচ্ছে: তরুণদের করণীয় কী?

এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। চারিদিকে এর জয়জয়কার। এর মাঝেই অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এআই আসার ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাবে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব, বেসিসের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমাস কবীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, এআই চাকরি কেড়ে নেবে না; বরং নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র ও সুযোগ তৈরি করবে।
সৈয়দ আলমাস কবীর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, আগামী কয়েক বছরে প্রায় ৯২ মিলিয়ন চাকরি বিলীন হয়ে যাবে। তবে একইসঙ্গে ৭২ মিলিয়ন নতুন চাকরি তৈরি হবে, যেগুলো এখনো আমাদের পরিচিত নয়। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে তরুণদের জন্য এটা হবে বড় সুযোগ।
তিনি বলেন, অনেক রকমের প্রফেশন বা অনেক ধরনের রোল তৈরি হবে, চাকরির রোল তৈরি হবে। এই যে নতুন নতুন প্রযুক্তিতে আমাদের তরুণরা যদি তাদের দক্ষতাটাকে বাড়াতে পারে, তাহলে কিন্তু আমার মনে হয় যে, এআই আসলে চ্যালেঞ্জ হবে না তাদের জন্য, এই যে নতুন নতুন রোলগুলো আসছে, সেগুলোর ব্যাপারে তাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, তাকে সেগুলো শিখতে হবে।
সৈয়দ আলমাস কবীরের মতে, এআই শুধু বিদ্যমান কাজগুলোকেই সহজ করবে না, বরং নতুন নতুন পেশার জন্ম দেবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন-ডেটা অ্যানালিটিক্স, ডেটা এথিক্স অফিসার/ডেটা এথিসিস্ট, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার (যারা চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য এআই টুলে সঠিক প্রম্পট লিখে কাঙ্ক্ষিত আউটপুট বের করবেন), ব্লকচেইন ও আইওটি এক্সপার্ট ইত্যাদি।
তিনি বলেন, যত বেশি তরুণরা এ ধরনের দক্ষতা অর্জন করবে, ততই তাদের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হবে। হতাশার কোনো কারণ নেই। সুযোগ শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তৈরি হবে।
তরুণ প্রজন্মের মাঝে এক ধরণের হতাশা কাজ করে এমন প্রশ্নের জবাবে এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, তাদের হতাশা করার কোনো কারণ নেই। আসলে তাদের ক্যারিয়ার অনেক অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে, অনেক রকম নতুন নতুন সুযোগ আসবে। দক্ষ হলে- শুধু দেশে না, বিদেশেও সুযোগ আসবে।
এআই: চ্যালেঞ্জ নয়, বরং আশীর্বাদ
এআই-কে তিনি আরও বলেন, আগে চার বছরে যে পরিমাণ শিখতে হতো, এখন এআই টুল ব্যবহার করে অল্প সময়েই দ্বিগুণ শেখা সম্ভব। এই এআই তরুণদের জন্য আশীর্বাদ। তারা কম সময়ে অনেক বেশি শিখতে পারছে। এআই দিয়ে সাধারণ ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ কম্পিউটার করে দেবে, ফলে তরুণরা আরও সৃজনশীল ও উচ্চস্তরের কাজ করার সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাত নিয়ে এক পশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২০-২৫ বছর ধরে যাত্রা শুরু হলেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। আমরা বারবার ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার এক্সপোর্টের স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এখনও আমরা দেড় বিলিয়নের বেশি যেতে পারিনি। মূল বাধা দক্ষ জনশক্তির অভাব। অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রি-দু’পক্ষই ব্যর্থ।
তিনি আরও যোগ করেন-অনেক মেগা প্রজেক্টে (মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, টার্মিনাল থ্রি ইত্যাদি) বিদেশি সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে। সরকার যদি স্থানীয় শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করত, তাহলে দক্ষতা হস্তান্তর হতো এবং অনেক কোম্পানি বড় হয়ে উঠত।
সৈয়দ আলমাস কবীরের মতে, বাংলাদেশের তরুণদের জন্য দুটি বড় কাজ জরুরি-দক্ষতা বৃদ্ধি করে নতুন প্রযুক্তিতে (এআই, ব্লকচেইন, আইওটি, ডেটা সায়েন্স) এক্সপার্ট হওয়া। অন্তত একটি-দুটি বিষয়ে গ্লোবাল এক্সপার্টিজ তৈরি করা, যাতে পৃথিবী জানে-এটা করতে হলে বাংলাদেশকেই যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের যদি দক্ষতা থাকে, তাহলে চাকরি খোঁজার দরকার হবে না। চাকরিই আমাদের খুঁজবে।