দেখে আসুন জ্যাকব টাওয়ার
দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। ভৌগোলিক স্থান বিবেচনায় যার চারদিকেই নদী আর বঙ্গোপসাগর। জোয়ার-ভাটার চিরায়ত খেলা আর গাঙচিলের অবাধ বিচরণ, ছোট ছোট দ্বীপ, সবুজ অরণ্য, পাখপাখালি শোভিত চরাঞ্চল-সমৃদ্ধ এ জেলায় রয়েছে ভ্রমণ আর আনন্দ কুড়াবার প্রাচুর্য। বিশেষ করে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা এখন পর্যটনশিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনাময়। দ্বীপের রানি ভোলায় পর্যটন-সম্ভাবনার আরো একটি আকর্ষণ সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ার। তাই করোনাকাল শেষে একবার দেখে আসুন চরফ্যাশনের জ্যাকব টাওয়ার।
চরফ্যাশন উপজেলার নান্দনিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুউচ্চ এই টাওয়ার। আইফেল টাওয়ারের আদলে এ ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘চরফ্যাশন টাওয়ার’ বা ‘জ্যাকব টাওয়ার’। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা চরাঞ্চল, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের কাছে এ অঞ্চলকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতেই নির্মিত হয় এই দৃষ্টিনন্দন টাওয়ার।
এই টাওয়ারের স্বপ্নদ্রষ্টা ভোলা-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় জ্যাকব টাওয়ার। জ্যাকব টাওয়ারে দাঁড়ালেই পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথালপাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চর কুকরিমুকরিসহ বঙ্গোপসাগরের বিশাল অংশ নজরে আসবে। রাখা হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার নানা কিছু দেখা যাবে। ভোলার চরফ্যাশনে সর্বোচ্চ আলোকসজ্জিত টাওয়ার এটি। টাওয়ারটির ডিজাইনার বিশিষ্ট স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন।
উপজেলা এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, টাওয়ারটির উচ্চতা প্রায় ২২৫ ফুট। চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদের পাশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ১৭ তলাবিশিষ্ট এই দৃষ্টিনন্দন টাওয়ার তৈরি করা হয়। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প-সহনীয় এই টাওয়ারের চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে ১৬ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ারের চারদিকে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫ মিলি ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস রয়েছে। ৭৫ ফুট মাটির নিচ হতে রয়েছে ৭০টি পাথর ঢালাই পাইলের ফাউন্ডেশন। এর ওপর নির্মিত টাওয়ারটি সম্পূর্ণ স্টিলের তৈরি। এই টাওয়ারের টপ ফ্লোরে রয়েছে কফিহাউস ব্যবস্থা। টাওয়ারটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া জ্যাকব টাওয়ারের অদূরেই রয়েছে আরো বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন জায়গা। চর কুকরমিুকরি, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চল যেকোনো বয়সের পর্যটককে দিচ্ছে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা। নদীবেষ্টিত মানুষের জীবনধারা এবং প্রবল ঢেউয়ের মাঝেও মাছধরার দৃশ্য পর্যটকের জন্য হয়ে ওঠে ভোলা ভ্রমণের বাড়তি পাওনা।
যাতায়াত : নদীপথ ছাড়া ভোলায় যাওয়া অসম্ভব। ঢাকা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন চরফ্যাশনের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। বিকেলে ঢাকা সদরঘাট থেকে সেসব লঞ্চে উঠলে পরদিন সকালে আপনি পৌঁছে যাবেন চরফ্যাশন ঘাটে। এসব লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে। দুজনের কেবিন ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। লঞ্চের ডেক ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। লঞ্চঘাটে নেমে স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট নিয়ে আপনাকে যেতে হবে চরফ্যাশন পৌরসভায়। ঘাট থেকে পৌরসভা পর্যন্ত পৌঁছাতে আপনার আরো খরচ হবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। থাকা-খাওয়ার জন্য একাধিক আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে জ্যাকব টাওয়ারের কাছাকাছি।
হয়তো লকডাউনের কারণে ভ্রমণপিপাসুরা এখন বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। অপেক্ষায় রয়েছেন করোনাকালের পর ভ্রমণের। আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা। ঘরবন্দি সময়ের অবসান হবে। ভ্রমণের জন্য উতলা হবেন আপনিও। আপনার ভ্রমণ-তালিকায় স্থান পাক জ্যাকব টাওয়ার।