ঈদের ছুটিতে
১০০ ডলারে, এক সপ্তাহ কলকাতা ভ্রমণ

বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়াতে যায়, কম-বেশি সবাই সাধারণত কলকাতাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। একবার কলকাতায় গিয়ে শুধু কলকাতাতেই কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেখুন না, কেমন লাগে? এক সপ্তাহ কলকাতার অলিগলিতে ঘুরেও শেষে দেখবেন তৃপ্ত হতে পারবেন না । দারুণ লাগবে, চমৎকার কাটবে কলকাতার সেই দিনগুলো।
তেমন জনপ্রিয় নয় আর ছোট-ছোট কিছু জায়গায় নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে পারেন। কখনো হেঁটে, কখনো বাসে বা ট্রামে, কখনো মেট্রোতে আবার প্রয়োজনে কখনো ট্যাক্সি করেও। সত্যি বলতে কি- এভাবে পাঁচ-ছয়দিন কলকাতার অলিগলিতে ঘুরে শহরটার প্রেমে পড়ে যাবেন আপনি ।
শুধু কলকাতা বা এর আশপাশেই কতকিছু যে আছে দেখার বা ঘুরে বেড়াবার সেটা কয়েকদিন কলকাতায় থাকলে আর এদিক-ওদিক গেলেই বা একটু খোঁজ খবর নিলেই জেনে নিতে পারবেন।
কলকাতায় কোথায় কোথায় যাওয়া যায় সায়েন্স সিটি
বাচ্চাদের নিয়ে একটি দিন অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায় অল্প কয়েক কিলো দুরের সায়েন্স সিটিতে। ঝকঝকে, ভ্রমণ বান্ধব, কম খরচে দারুণ উপভোগ্য একটি জায়গা। বড়-ছোট সবার জন্যই এক অনন্য সুন্দর সময় কাটানোর জায়গা গঙ্গার পাড়। আমরা যাকে পদ্মা নামে চিনি বা জানি। নিউমার্কেট থেকে যে কেউ চাইলে হেঁটে, ট্যাক্সি করে, বা এসপ্ল্যানেড থেকে বাসে করেও যেতে পারেন। কী দারুণ ঝকঝকে নদীর পাড় ভাবাই যায় না।
আর সেই গঙ্গার পাড় থেকেই স্টিমারে করে যেতে পারেন ওপারের হাওড়া স্টেশনে মাত্র ৫ টাকায়। এখানে লাভ আছে দুই রকম। স্বচ্ছ জলের মাঝে নৌ ভ্রমণ আর বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারবেন বুক ভরে। আর পারবেন অল্প খরচে হাওড়া যাওয়ার বা ঘুরে দেখার সুযোগ। ময়দান
সবার জন্যই চমৎকার একটা জায়গা হতে পারে ময়দান। মানে আমরা যাকে মাঠ বলে থাকি। সেকি বিশাল ময়দান রে বাবা, এক ময়দানেই দেখলাম অন্তত ২০টি টিম ক্রিকেট খেলছে, কয়েকটি টিম ফুটবল, শত শত গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন প্যারেড করছে, শত শত, ছেলে-বুড়ো, তরুণ-তরুণী ঘুরে বেড়াচ্ছে আর বসে-বসে আড্ডা জমিয়েছে অসংখ্য মানুষ। আমাদের ঢাকা শহরের অন্তত ১০০ মাঠ একত্রিত করলে ময়দানের অর্ধেকের কাছাকাছি যেতে পারে।
রেসকোর্স
এর পাশেই রয়েছে বিখ্যাত রেসকোর্স ময়দান। নামটা নিশ্চয়ই অনেকেরই পরিচিত। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে ঘোড়া দৌড়ের খেলা হয়ে আসছে আর এখনো হয়। বিকেল ৩ বা ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই খেলা যে কতটা রোমাঞ্চকর সেটা তো আমরা বিভিন্ন সিনেমাতেই দেখে থাকি। বাস্তবে সেটা নিশ্চয়ই আরো শিরহরণ জাগানিয়া হবে, কি বলেন?বিদ্যাসাগর সেতু
এরপর রয়েছে অদ্ভুত উপায়ে বিশাল আকারের বিদ্যাসাগর সেতু। নদী শাসন না করেও বা নদীর বহমানতাকে কোনো বাঁধার সৃষ্টি না করেই, কীভাবে এত বড় একটা সেতু করেছে সেটা একটা অবাক করার মতো ব্যাপারই বটে। তবে এখানে গিয়ে এটা উপভোগ করার জন্য ট্যাক্সিই শ্রেয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
কলকাতা মিউজিয়াম
নিউমার্কেটের প্রায় সঙ্গেই কলকাতা মিউজিয়াম, পরিবার নিয়ে একবেলা এখানে কাটানো যেতেই পারে। আর আছে যেকোনো জায়গা থেকে মেট্রোতে চড়ে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা বা ভ্রমণের নতুন একটা স্বাদ নেওয়ার অনন্য উপায়। যেখানের পরিবেশ আর দ্রুতগামী চলাচলকারী অভিনব যানে মজা পাবে ছেলে-বুড়ো সবাই। অন্তত যারা এর আগে এই স্বাদ পায়নি। আর খরচটা, সাধ্যের একটু বেশিই নাগালে।
এ ছাড়া রয়েছে রয়েছে ইকোপার্ক, জোড়াসাঁকো, শান্তি নিকেতনসহ আরো অনেক জায়গা। তবে সেগুলোর জন্য আরো একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে আপনাকে।
যাওয়া-আসা আর থাকা-খাওয়া
কলকাতায় বেশ কয়েক ভাবেই যাওয়া যায় আজকাল, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সরাসরি মৈত্রী এক্সপ্রেস, ভাড়া এক হাজার ৫০০ টাকা, বাসে গেলে এসির ভাড়া এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। সবচেয়ে কম খরচে যেতে চাইলে বাসে বেনাপোল বা ট্রেনে যশোর হয়ে বেনাপোল, বর্ডার পার হয়ে বনগাঁ যাবেন ৩৫ টাকায় অটোতে করে, এরপর বনগাঁ স্টেশন থেকে ট্রেনে করে শিয়ালদহ ২৫ টাকা ট্রেন ভাড়া। সেক্ষেত্রে আপনি মাত্র ১০০০ টাকায়ই চলে যেতে পারবেন।
সব মিলে মোটামুটি ১০০ ডলারে অনায়াসে যাওয়া-আসাসহ এক সপ্তাহ কাটিয়ে দিতে পারবেন কলকাতায়।
ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতায় থাকার খরচটা একটু বেশি। সিঙ্গেল রুমে সাধারণ ভাবে থাকতে চাইলে ৬০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন একটু খুঁজলেই। ভালো মানের এসি ডাবল রুমের ভাড়া পড়বে দুই হাজার থেকে- দুই হাজার ৫০০ টাকা। নন এসি পাবেন এক হাজার থেকে- এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
তবে কলকাতায় খাবার খরচ বেশ কম, মাত্র ২৫ টাকায় সকালের নাস্তা বেশ ভালোভাবে, ৫০-৬০ টাকায় আরাম করে দুপুর আর রাতের খাবার খেতে পারবেন নিউমার্কেটের আশপাশের হোটেলে।
তো হাতে কয়েকদিন সময় নিয়ে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা নিজের মতো করেই ঘুরে আসতে পারেন কলকাতায় কয়েকদিনের জন্য। মন্দ যে লাগবে না, সে কথা বলতে পারি।