ঈদের ছুটিতে
২৯১ বছরের প্রাচীন শিতলাই জমিদার বাড়ি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামে শিতলাই ঐতিহাসিক রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এটি অনেকের কাছে ‘শিতলাই হাউজ’ নামেও পরিচিত। অযত্ম অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই জমিদার বাড়িটি। তবুও প্রাচীন এই বাড়ির স্থাপত্যশৈলী এখনো দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। তাই অনেকেই ঘুরতে আসে এখানে।

ইতিহাস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন জমিদার জগেন্দ্রনাথ মৈত্রী এই রাজবাড়িটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই জমিদার বংশের মূল গোড়াপত্তনকারী হচ্ছেন চাঁদীপ্রসাদ মৈত্রয়। চাঁদীপ্রসাদ মৈত্রেয় সিরাজগঞ্জ জেলার শরতনগর এলাকার জমিদার ছিলেন। জমিদার চাঁদীপ্রসাদের জগন্নাথ মৈত্রেয় নামে এক পুত্র সন্তান ছিল। যিনি ছিলেন এই জমিদার বংশের দ্বিতীয় জমিদার। তার ঘরে আবার জন্ম নেন জমিদার লোকনাথ। জমিদার লোকনাথের কোনো সন্তান ছিলো না। তাই তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী চন্দ্রনাথ মৈত্রয় নামে এক পুত্র সন্তান দত্তক নেন। এই চন্দ্রনাথ মৈত্রয়ও নিঃসন্তান ছিলেন। তাই তিনিও যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রয় নামে এক পুত্র সন্তানকে দত্তক নেন। তিনিই পরবর্তীতে তাদের জমিদারী বংশের পূর্ববর্তী জমিদারী এলাকা সিরাজগঞ্জ জেলার শরৎনগর ছেড়ে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের শিতলাই নামক এলাকায় জমিদারী স্থানান্তর করেন এবং এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের মতে, পার্শবর্তী ‘মাঝগ্রাম’ নামক গ্রামে জমিদার জগেন্দ্রনাথ মৈত্রীর একটি সারাইখানা ছিল। যেটিতে হিসাব-নিকাশ করা হতো। জগেন্দ্রনাথ মৈত্রী তৎকালীন হান্ডিয়াল, সিদ্দিনগর, মাঝগ্রাম, শিবরামপুর, সমাজ, শীতলাই, নিমাইচড়াসহ পুরো চাটমোহর উপজেলা শাসন করত।

বৈশিষ্ট্য
রাজবাড়িটির তিনটি একতালা ভবন এবং একটি দোতলা ভবন নিয়ে গঠিত। এই রাজবাড়িটির পাশেই ঐতিহাসিক শীতলাই দিঘি বয়ে গেছে, যা হেমন্ত সাগর নামেই বেশি পরিচিত। তবে এই জঙ্গলের মধ্যেও টিকে আছে এই বাড়িটি। সামনে রয়েছে একটি বিশাল দিঘি। বাড়িটির চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা। সংস্কার কাজ করা হলে চাটমোহরের এ জমিদার বাড়িটি হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান। এটি সংস্কার করলে যেমন বাড়বে ভ্রমণপিপাসু, তেমনি হবে এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থান।

যেভাবে যাবেন
জমিদার বাড়িটি দেখতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর থেকে সকালে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে চড়ে চাটমোহরে পৌঁছাবেন। ট্রেনে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলরুটের চাটমোহর স্টেশনে নেমে মাত্র ১২ কিলোমিটার উত্তরে সিএনজি অথবা অটো ভ্যানের মাধ্যমে হান্ডিয়াল বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে অটো ভ্যানে চড়ে সহজে যেতে পারবেন শিতলাই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। অটো ভ্যানে সময় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা। এ ছাড়াও বাসযোগে গাবতলী থেকে মান্নান নগর এসে নামতে হবে। এতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। মান্নান নগর নেমে মাত্র চার কিলোমিটার দক্ষিণে সিএনজি বা অটো ভ্যানে যেতে হবে হান্ডিয়াল বাজারে। সেখান থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে অটো ভ্যানে চড়ে সহজে যেতে পারবেন শিতলাই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ী। এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।

হান্ডিয়ালে ও চাটমোহরে ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। দুপুর থেকে ঘুরে বিকেলে পদ্মা এক্সপ্রেসে অথবা বাসে চড়ে আবার ঢাকা ফিরে আসতে পারবেন। এ ছাড়া, রাত্রিযাপন করতে চাইলেও চাটমোহর, পাবনা ও ঈশ্বরদীতে রয়েছে আধুনিক সব হোটেল।

স্থানীয়রা জানান, দেশ ভাগের পর এ জমিদারের বংশধররা ভারতে চলে যাওয়ার পর তাদের বেশ কিছু সম্পত্তি বিভিন্ন পন্থায় কব্জায় রেখেছেন কিছু অসাধু চক্র। এই জমিদার বাড়ি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে চলনবিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন স্থানীয়রা।