নজরুল স্মৃতিধন্য ত্রিশালে একদিন

ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবি দলে। এর পর একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন। এভাবে বেশ কষ্টের মধ্যেই তাঁর বাল্যজীবন অতিবাহিত হতে থাকে। এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা কাজী রফিজউল্লাহর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দোকানে একা একা বসে যেসব কবিতা ও ছড়া রচনা করতেন, তা দেখে রফিজউল্লাহ তাঁর প্রতিভার পরিচয় পান। তিনিই তাঁকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। বলছি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা।
গন্তব্য পথ
তিস্তা এক্সপ্রেসে করে আপনাকে যেতে হবে ময়মনসিংহ। চলতি পথে গফরগাঁও স্টেশনে গরম গরম শিঙ্গাড়ার স্বাদ নিয়ে নিতে পারেন। ট্রেন থেকে নেমে রিকশা নিয়ে যাবেন ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে। গাঙ্গিনার পাড়, সি কে ঘোষ রোড, সেহড়া ঢাকা রোড দিয়ে পৌঁছাতে হবে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে গেটলক সার্ভিসের বাসে আপনাকে বইলর নামক স্থানে নামিয়ে দেবে। এর পর পৌঁছে যাবেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য দারোগা বাড়িতে।
যা দেখবেন
দারোগা বাড়িতে ঢুকেই দেখবেন নজরুল পাঠাগার। দেখা পাবেন প্রায় কয়েক হাজার বই আছে এই পাঠাগারে। এখানে যত্নসহকারে রয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের স্বহস্তে লিখিত বই, নজরুল জীবন নিয়ে লেখা বই, নজরুলকে নিয়ে সমালোচনা করাসহ বিভিন্ন গানের রেকর্ড। কবির ওপর বই ছাড়াও সমসাময়িক লেখকদের বই রয়েছে। এখানে কবি নজরুল যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। কবি তাঁর কবিতা-গানে যেসব গাছের নাম উল্লেখ করেছেন, সেই গাছগুলো দিয়ে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রে ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ বাগান তৈরি করা হয়েছে। এখানে কবি যে পুকুরে গোসল করতেন, সেটিও সংরক্ষণ করা আছে। বিলের পাড়ে একটি বটগাছের নিচে কবি নজরুল আপন মনে বাঁশিতে সুর তুলতেন। এটি এখন নজরুল বটবৃক্ষ। দুই বাংলার নজরুল ভক্তদের কাছে এটি তীর্থস্থানের মর্যাদা পেয়েছে। বটের নিচে প্রায়ই বসে কবিদের আসর।
জাদুঘরের নিচতলায় ময়মনসিংহ ত্রিশালে অবস্থানকালে যে খাটে ঘুমাতেন কবি, সে খাটটি রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় দেখবেন কবির বিভিন্ন ধরনের ছবি, যা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে । এর পাশেই আছে নজরুল একাডেমি। কবির স্মৃতিবিজড়িত দরিরামপুর হাই স্কুলই বর্তমানে নজরুল একাডেমি। এই স্কুলে কবি সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করেছেন। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার খাতায় নজরুল লিখেছিলেন, আমি এক পাড়া গাঁয়ে স্কুল-পালানো ছেলে, তার ওপর পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও 'ক' অক্ষর খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্কুলের হেডমাস্টারের চেহারা মনে করতেই আজও জলতেষ্টা পেয়ে যায়। কবির স্মৃতিকে ধরে রাখতে কবির সেই ক্লাস রুম ও দেয়ালে এই কবিতার লাইন খোদাই করে সংরক্ষণ করা আছে।