আক্রান্ত দুই লাখ ছুঁইছুঁই, মৃত ৮ হাজার

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা ইউরোপে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মৃত্যুর ভয়াবহতায় চীনকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে ইতালি। দেশটিতে দুই দিনে সাতশর বেশি মানুষ মারা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৪৫ জন। ইতালিতে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৫০৩ জন এ রোগে মারা গেছেন। ইরান, স্পেন, ফ্রান্সসহ আরো অনেক দেশেও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৫টি দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখে। এক লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৮১ হাজার ২৭১ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মারা গেছেন সাত হাজার ৯৭১ জন, বাকিরা চিকিৎসাধীন। তবে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পর অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষকও ভাইরাসটির প্রতিষেধক তৈরির ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত গতকাল মঙ্গলবার থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো।
জার্মানিতে ক্লাব, বার, অবকাশ কেন্দ্র, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। এ ছাড়া সোমবার মধ্যরাত থেকে স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে স্পেন। ওই সময়ের পর কেবল নিজেদের নাগরিক, বাসিন্দা ও বিশেষ ক্ষেত্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
এদিকে করোনা আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রেরও ৪০টি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। ২৯টিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৩২৯ জন আর এর মধ্যে ১০৭ জন মারা গেছেন। দেশটির অনেক বড় কোম্পানি তাদের কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে জুলাই পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকতে পারে।
ফিলিপাইনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশটির লুজন দ্বীপের পাঁচ কোটি ৭০ লাখ বাসিন্দাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ভারতেও সংক্রমণ আতঙ্কে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাজমহলসহ সবকটি বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকারগুলো। সন্দেহভাজন সব রোগীকে পরীক্ষার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষা সফল হলেও টিকা বাজারে আসতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। এর মাঝেই আশার বাণী শোনালেন অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলের দাবি, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। মার্চের শেষ থেকেই করোনা আক্রান্তরা এই ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তাঁরা।