করোনায় উদ্বিগ্ন বিশ্বে সুস্থ হলেন ৭৫ হাজার মানুষ

বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো জায়গায় আছে, তা বলা যাচ্ছে না। হাতেগোনা কয়েকটি দেশ এ ভাইরাসকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও হিমশিম খাচ্ছে অধিকাংশ রাষ্ট্রই। বিশেষ করে ইউরোপে এর পরিস্থিতি সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।
তবে করোনায় আক্রান্তের ভয় থাকলেই যে তা বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আসবে, তা নয়। কারণ, আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরারও অনেক খবর। আর সে সংখ্যাটাই বরং বেশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বিভিন্ন দেশের ৭৫ হাজার ৫৩২ জন মানুষ। দিনে দিনে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে এও সত্য, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার খবরও নেহাত কম নয়। সে তুলনায় মৃতের সংখ্যা একদমই কম। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫৫ হাজার ৯২৩ জন। অন্যদিকে, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২৫ জনের। এর মধ্যে চীনেই মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২০০ জনের। তবে আশঙ্কা কাটিয়ে এখন অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে দেশটি। সেখানে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৯১১ জন। আর আক্রান্ত বাকিরাও সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরবেন বলে আশা চিকিৎসকদের।
চীনের পরই করোনায় বেশি মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। সেখানে ২১ হাজার ১৫৭ জন আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৪৪১। আর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।
অন্যদিকে, স্পেনে হুট করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আক্রান্তদের ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল শনিবার থেকে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। তবে এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৫১৭ জন। অন্যরাও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশায় রয়েছেন।
এদিকে ইরান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে ১২ হাজার ৭২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬১১ জনের মৃত্যুর বিপরীতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ৩৩৯ জন।
এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে শুরুতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এখন তা মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। আর দেশটিতে মৃত্যুর হারও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ১৬২ জন। এ মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। আর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৮৩৪ জন। মৃত্যুর হার কম হওয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মনে করেন, ভাইরাসটি যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে, তত দ্রুত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমানো সম্ভব। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা না গেলে তার মাধ্যমে আরো অনেক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হবেন। আর এ ক্ষেত্রেই সবচেয়ে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরে করোনা আক্রান্ত রোগী যেমন শনাক্ত করা হচ্ছে, তেমনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। সেখানে ২১২ করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০৫ জন। আর দেশটিতে সবচেয়ে স্বস্তির খবর হলো, সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া থাইল্যান্ডে করোনায় ৮২ জন আক্রান্তের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে একজনের।
প্রতিদিনই নতুন করে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাসে। এ ছাড়া এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়বে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাই এ ভাইরাস মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এও আশ্বস্ত করছেন, আক্রান্ত না হওয়ার জন্য যেমন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি আক্রান্ত হলেই যে তা ঝুঁকি বয়ে নিয়ে আসবে, তা নয়।