বিশ্বে করোনায় মৃত বেড়ে ৫৮১৯, আক্রান্ত দেড় লাখের বেশি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮১৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫৫ হাজার ১৪৩ জন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭৫ হাজার ৫১২ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে এলেও বেশ কয়েক দিন থেকেই ইউরোপ রয়েছে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে। এর মধ্যে ইতালি রয়েছে সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থায়। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৭৫ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ১৫৭ জনে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে ইতালিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে দিয়েছে চীন। করোনা মোকাবিলায় দেশটিতে মাস্কসহ আরো প্রয়োজনীয় নানা ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী পাঠিয়েছে চীন।
এদিকে, করোনাভাইরাসে হুট করেই স্পেনের পরিস্থিতি আরো সংকটজনক হয়ে উঠেছে। ইউরোপের মধ্যে ইতালির পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে দেশটি। সেখানে এখন পর্যন্ত ১৯৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৯১ জনে। এর মধ্যে সেখানে একদিনেই দেড় হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ইতালির মতো গতকাল শনিবার থেকে গোটা স্পেনে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ফলে দেশটির চার কোটি ৭০ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। খাবার, ওষুধ ও জরুরি জিনিসপত্র কেনা ছাড়া কোনো কারণে বাইরে যাওয়া যাবে না। খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাটও খোলা রাখা নিষেধ।
প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা অচিরেই কাজকর্মে ফিরে যাব এবং বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করব। তবে সময় আসার আগ পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।’
এদিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে ফ্রান্সে মৃত বেড়ে ৯১ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৪৯৯ জন। জার্মানিতে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আক্রান্ত চার হাজার ১৮১ জন। সুইজারল্যান্ডে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের, সেইসঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৩৫৫ জনে পৌঁছেছে। নরওয়েতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪২ জন। নেদারল্যান্ডসে ১২ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫৯ জনে। ডেনমার্কে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৪ জন এবং বেলজিয়ামে চারজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮৯ জনে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১৪০ জনে পৌঁছেছে। সেখানে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় আগামী সপ্তাহ নাগাদ জনসমাগম নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৬৩ জন। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেওয়ার সময় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা তহবিলেরও ঘোষণা দেন তিনি। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয় ইউরোপের ২৭টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ।
ট্রাম্প বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ফলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি। একদিন এই মহামারির অবসান ঘটবে।’
ইরানেও বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ৬১১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৭২৯। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় আজ রোববার থেকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে সৌদি আরব।
এরই মধ্যে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ও রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোথাও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ৬৯ বছর বয়সী এক নারী ও গত মঙ্গলবার কর্ণাটকে ৭৬ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
এদিকে গত শুক্র ও শনিবার দুই দিনে কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান, গিনি, মৌরিতানিয়া, সোয়াজিল্যান্ডসহ আফ্রিকা মহাদেশের ১৯ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। এই রোগ মোকাবিলায় কৌশলের আশ্রয় ও জরুরি ব্যবস্থাপনাকে আরো কার্যকর করে তোলা, পরীক্ষাগারের উন্নয়ন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেই এক্ষেত্রে আমরা সফল হব। এ ছাড়া সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনা মানতে হবে সবাইকে।’