যুক্তরাষ্ট্রের করোনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক কাজ করছে না।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের চমৎকার শনাক্তকরণ পদ্ধতি রয়েছে। লোকজন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছে।’
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর প্রধান ডা. অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, ‘এখন আমাদের যেই মাপে শনাক্তকরণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, সে অনুযায়ী ব্যবস্থাটি কাজ করছে না। এটা অন্তত স্বীকার করা উচিত।’
কংগ্রেসের শুনানিতে ডা. ফসি বলেন, ‘অন্য দেশে শনাক্তকরণ পদ্ধতিটি খুব সহজভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদেরটা তেমন নয়, বেশ জটিল। আমি মনে করি, এটা সহজ করা দরকার। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত শনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) আবিষ্কৃত পদ্ধতিতেই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এতে ত্রুটি রয়েছে এবং এর ফলে অনেক পরীক্ষার ফল ঠিকঠাক আসছে না।
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩৬ জন। অন্যান্য আক্রান্ত দেশের তুলনায় করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তৎপরতা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। বলা হচ্ছে, করোনার প্রকোপে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশটির নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নির্দিষ্ট করে বলতেই পারেননি এ পর্যন্ত কতজনের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করানো হয়েছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দিতে চান।
তবে সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৯ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া দুই লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করেছে। প্রতিদিন তারা ২০ হাজার মানুষের শরীরে করোনা আছে কি না, তা পরীক্ষা করছে। যুক্তরাজ্যও প্রতিদিন প্রায় এক হাজার জন করে এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৭০০ নাগরিকের পরীক্ষা করিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডায় একশজনের মতো নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারাও চার হাজার ১৮৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করিয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৬৭ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৮১ জন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন।
এদিকে, বিশ্বের ১২৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনে এর প্রাদুর্ভাব কমে গেলেও ইউরোপের দেশ ইতালির অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১১৩ জনে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে সেখানে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, অফিস, ক্যাফে ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৯ জনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সেখানে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৮৬৯ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ৬৬ জন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্পেনে ৮৬ জন, ফ্রান্সে ৬১ ও জার্মানিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ জনে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।