ছিটে প্রশাসনিক তৎপরতা, নিরাপত্তায় বসছে ক্যাম্প
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুস্বাক্ষরের দলিলপত্র হস্তান্তরের পর এবারে ছিটমহলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ময়দানে নামল ভারতীয় প্রশাসন। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় অংশে পড়া ছিটমহলগুলোকে প্রশাসনিক আওতায় আনতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু হয়েছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। দুই দেশের ছিটমহল লাগোয়া ভারতীয় জমিতে ছয়টি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করা হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পরিপ্রেক্ষিতে যেন কোনো ধরনের বিবাদ তৈরি না হয়, মূলত সে জন্যই পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে আজ দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) রাজেশ যাদব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর পাশাপাশি ছিটমহলগুলোতে নিরাপত্তার খাতিরে এখন থেকে পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হবে। সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ শুরু করেছি।’
এদিকে ছিটমহলে পুলিশৱ ফাঁড়ি তৈরির খবর চাউর হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা খুশিতে ফেটে পড়েন। দশকের পর দশক ধরে চূড়ান্ত নিরাপত্তাহনীতার মধ্যে বসবাস করা ছিটমহলের বাসিন্দারা এখন থেকে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা পাবেন বলে তাদের বিশ্বাস। এ আনন্দে দুর্বিসহ গরমের দুপুরেও ছিটমহলের বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও বাড়িতে বাড়িতে জটলা করেন মানুষজন।
স্থানীয় মশালডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী, গণেশ মণ্ডল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখানে এক সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ আর বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিজিবির ভারী বুটের আওয়াজ শোনা যেত। এখানে জন্মাবধি আমাদের নিরাপত্তায় কখনো পুলিশ আসেনি। পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো অভিযোগ জানানোর অধিকার আমাদের ছিল না। আজ সেই অধিকার অর্জিত হতে যাচ্ছে জানতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। এখন বাড়িতে বউ-বাচ্চা নিয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পারব আমরা।’
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ছিটমহলের পাশে ভারতীয় জমিতে ছয়টি জায়গা চিহ্নিত করে পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর জন্য এরই মধ্যে জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল।
গত ৬ জুন বিকেলে ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজেদের মধ্যে দলিল হস্তান্তর করেন। এর মধ্য দিয়ে ৬৮ বছর ধরে ‘বন্দিজীবনে’ থাকা প্রায় অর্ধলাখ নাগরিকের জীবনের ‘মুক্তির’ প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হয়।
এ খবরে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ছিটমহলের বাসিন্দারা উল্লাস প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বিকেলে মশালডাঙ্গায় আনন্দ মিছিল বের করে ছিটমহলবাসী। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির শীর্ষ নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, আইনি উপদেষ্টা আহসান হাবিব প্রমুখ। মিছিলটি মশালডাঙা প্রদক্ষিণ করে ফেরার পথে ভারতীয় অংশের বটতলায় ছিটমহলবাসীর সঙ্গে বচসা হয় কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের। তবে বিষয়টি মিটে যায় সেখানেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৭ জুন রাতে ঢাকা সফর শেষে দিল্লি ফিরে যান।
এর পরের দিন অর্থাৎ সোমবার দুই দেশের তরফে জানানো হয়, ১৯৭৪ সালের চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকল অনুযায়ী ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল এবং বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহল বিনিময় আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে শুরু হবে।