ছবি বেচে শিশুদের পাশে ছোট্ট পল

বাবার সঙ্গে বসে একদিন টেলিভিশন দেখছিল ছোট্ট পল। টিভিতে সিরিয়ার শিশুদের ঠাণ্ডায় কষ্ট পাওয়া নিয়ে ইউনিসেফের একটি বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছিল। সেটা দেখে ছোট্ট পল বাবাকে প্রশ্ন করে, ‘এই ছোট্ট শিশুগুলোকে একটু উষ্ণতা দিতে আমরা কি কিছু অর্থ পাঠাতে পারি?’
যে কথা বড়রাও সহজে বুঝতে চান না, সেটাই বুঝেছে ছয় বছরের পল জুলিস বাটলার। মিলেমিশে থাকলে সবাই যে ভালো থাকতে পারে, এ বয়সেই তা উপলব্ধি করেছে সে। তাই নিজের আঁকা চিত্রকর্ম বিক্রির অর্থ সে দান করেছে অ্যাঙ্গোলার দরিদ্র শিশুদের জন্য। এ প্রসঙ্গে পল বলেছে, ‘আমরাও তাদের অবস্থায় থাকতে পারতাম কিংবা তারাও আমাদের জায়গায় থাকতে পারত। তাহলে আমরা একসঙ্গেই তো ভালো থাকতে পারি।’
অ্যাঙ্গোলা এমন একটি স্থান, যেখানে আবর্জনা পোড়ানোর কারণে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না, যেখানে এই পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষগুলো বাস করে। পলের মতো মানুষ কিংবা ইউনিসেফের সহায়তা না পেলে সেখানকার স্থানীয় শিশুরা হয়তো বেশিদিন বাঁচতেই পারত না। লুয়ান্ডার বস্তিগুলোতে যেখানে শিশুশ্রম একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার, সেখানে পলের চিত্রকর্ম বিক্রির ২১০ ইউরো পাওয়া তাদের জন্য ভীষণ ভাগ্যের ব্যাপার।
স্বশিক্ষিত এই আধা আমেরিকান-আধা রোমানিয়ান চিত্রশিল্পী পল তার মা-বাবার সঙ্গে জার্মানির একটি গ্রামে বাস করে। আমেরিকার কার্লেসটনের ‘স্পোলেটো ফেস্টিভ্যাল’ ও সাউথ ক্যারোলিনার ‘পিকোলো স্পোলেট্টো আর্টস ইভেন্টে’ যোগ দেওয়ার ভীষণ আগ্রহ তার। তার আঁকা ছবি দেখে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চায় সে।
ইন্ডিগোগো ডটকমে নিজের সম্পর্কে সে লিখেছে, “খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা আমার ভীষণ পছন্দের। মাত্র চার বছর বয়সেই আমি আমার প্রথম বিমূর্ত চিত্রকর্মটি আঁকি। এর পর গত দুই বছর নিজে নিজেই ছবি আঁকা শিখেছি আমি। এখন সাধারণত গাছ আর ফুলের ছবি আঁকি। জার্মানিতে ছোট একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম। সেখান থেকে পাওয়া ২১০ ইউরো আমি দান করেছি অ্যাঙ্গোলার শিশুদের কল্যাণে। এখন আমার লক্ষ্য হলো, চিত্রকর্ম বিক্রির অর্থ অভাবী মানুষের জন্য ব্যয় করা। কার্লেসটনে ‘স্পোলেটো ফেস্টিভ্যালে’ অংশ নেওয়ার ফলে আমি আমার লক্ষ্যের দিকে আরেকটু অগ্রসর হবো। আমার ছবি বিক্রির অন্তত ২০ শতাংশ অর্থ আমি তাদের জন্য ব্যয় করব, যারা আমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।”
পল আরো লিখেছে, ‘এরই মধ্যে আমি ছবির জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছি এবং এ বিষয়টিকেই আমার পেশা হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। দানের জন্য আরো অর্থ জোগাড় করতে আমি ভবিষ্যতে নতুন প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।’