বিক্ষোভে উত্তাল গুজরাট, নিহত ৮
প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ আর আন্দোলনে উত্তাল ভারতের গুজরাট রাজ্য। গতকাল থেকে চলা এই বিক্ষোভে একজন পুলিশসহ মোট ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্যাটেল সম্প্রদায়ের নেতা হার্দিক প্যাটেলের ডাকে আজ বুধবার সকাল থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গুজরাটের বড় বড় শহর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পথে নেমেছে আধা সামরিক বাহিনী।
আহমেদাবাদ ও মেহসানার মতো শহরে আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিক্ষোভ। আহমেদাবাদ শহরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাস এবং পুলিশফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা এবং টিয়ার গ্যাস ছুড়লে আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে পুরো পরিস্থিতি। সংঘর্ষে উত্তর গুজরাটের পালানপুরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর আগে গতকাল আহমেদাবাদে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস (ওবিসি) কোটা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে প্যাটেল সম্প্রদায়ের মানুষরা। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা এবং তাদের নেতা হার্দিক প্যাটেলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গুজরাট। আন্দোলনকারীরা গতকাল মঙ্গলবার হামলা চালায় গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রজনী প্যাটেলের বাড়িতে। সেই সঙ্গে বেশকিছু বাসে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পরে গতকাল সন্ধ্যায় হার্দিক প্যাটেলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তবে এতেও শান্ত হয়নি গুজরাট। গতকাল রাতেই হার্দিক প্যাটেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে বনধের ডাক দেন। ফলে আজ সকাল থেকেই গুজরাটে চলছে প্যাটেল সম্প্রদায়ের ডাকে বনধ। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের আহমেদাবাদ, সুরাত, ভদোদারাসহ বিভিন্ন এলাকায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নয়টি থানা এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দী বেনের বাড়িতে।
যে কোনো ধরনের গুজব ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হোয়াটস অ্যাপ ও টুইটার পরিষেবা। আহমেদাবাদ ও সুরাটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। এরই মধ্যেই কেন্দ্র থেকে পাঁচ হাজার সেনা নিয়ে আসা হয়েছে গুজরাটে। কিন্তু তারপরেও বিক্ষোভ আন্দোলন কমেনি, বরং আরো তীব্র হয়েছে। আহমেদাবাদের বাপুনগর, মেহেসানার কোদাপাড়া, আলথান, সুরাটের বিভিন্ন এলাকায় গতরাত থেকেই পুলিশের সঙ্গে চলছে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ। এই পরিস্থিতিতে গুজরাটবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দী বেন।
প্যাটেল সম্প্রদায়ের জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল গুজরাট। গতকাল হার্দিক প্যাটেল গ্রেপ্তারের পরেই আগুনে ঘি পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষে কার্যত আগুন জ্বলে গুজরাটে। প্যাটেলদের দাবি, তাদের জন্য ওবিসি কোটায় সংরক্ষণ আরো বাড়াতে হবে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে গুজরাট। তাই নতুন করে সংরক্ষণ সম্ভব নয়। এই নিয়েই শুরু হয় বিক্ষোভ।
এদিকে আজ বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে গুজরাট বিধানসভার তিন দিনের বাদল অধিবেশন। যে অধিবেশনে প্যাটেল ইস্যুতে চাপে পড়তে শুরু করেছে সরকারপক্ষ। অন্যদিকে প্যাটেলদের সংগঠনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, তাদের দাবি মানা না হলে পরবর্তী বিধানসভা ভোটে গুজরাটে আর পদ্ম ফুটবে না।
গুজরাটের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আনন্দী বেন প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। প্রয়োজনে গুজরাটে আরো বাহিনী পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, হিংসা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যা সমাধান করার কথা জানিয়েছেন তিনি। এক ভিডিওবার্তার মাধ্যমে গুজরাটবাসীর প্রতি এই আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে, প্যাটেল সম্প্রদায়ের নেতা হার্দিক প্যাটেল জানিয়েছেন, তিনি সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে বনধ পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বনধে উত্তাল হয়ে আছে গুজরাট।