ভারী বুটের আওয়াজে থমথমে গুজরাট
চাপা উত্তেজনা আর সেনা জওয়ানদের ভারী বুটের আওয়াজে থমথমে হয়ে আছে ভারতের গুজরাট রাজ্য। একই সঙ্গে সুরাটে গত দুদিনের সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরো একজনের নাম। এ নিয়ে গত দুদিনের সহিংস বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছয়জন।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। এদিন সকাল থেকেই রাজ্যের সুরাটে প্যাটেল সম্প্রদায় সরকারি চাকরি আর শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মর্যাদার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এ জন্য আহমেদাবাদের জিএমডিসি ময়দানে জড়ো হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
বুধবার জিএমডিসি ময়দানে পুলিশের বাধার মুখে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। উল্লেখ্য, গুজরাট দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজগুলো। এমনকি গণপরিবহনও বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে গুজরাটের আমেদাবাদ, সুরাট, রাজকোট, জামনগর, মোরবি, ভাদোরা, মেহেসানা, বনসকান্থার মতো বিভিন্ন শহরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ১৩৩ কোম্পানি সেনাবাহিনীর জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে সিএরপিএফ, রাজ্য আরপিএফ এবং বিএসএফকেও। সহিংস এলাকাগুলোতে ফ্ল্যাগ মার্চ করছে সেনা ও আধা সেনার জওয়ানরা। সরকার রাজ্যে আধাসামরিক বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুরই সমাধান করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল আবারও শান্তি বজায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং সহসভাপতি রাহুল গান্ধীও। এ ছাড়া রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতি হওয়ার জন্য বিজেপিকে সরাসরি দায়ী করেছে দলটি।
আজ সকালে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজওয়াল অভিযোগ করে বলেন, গুজরাটের পরিস্থিতির জন্য বিজেপি এবং গুজরাটের আনন্দিবেন সরকারই দায়ী।
আন্দোলেনের নেতৃত্বে থাকা ২২ বছর বয়সী তরুণ হার্দিক প্যাটেলও শান্তি বজায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে হার্দিক অভিযোগ তুলেছেন, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা করার নির্দেশ কে দিল সেটাই স্পষ্ট নয়। গুজরাট সরকার বলছে, তারা লাঠিপেটা করার নির্দেশ দেয়নি। তাহলে কি পুলিশ সাধারণ মানুষের ওপর গুন্ডাগিরি করল!
একই সঙ্গে হার্দিক নিরীহ জনগণের ওপর পুলিশের বর্বর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে স্বামী প্রমুখ মহারাজ, স্বামী মাধবপ্রিয় দাসজি, স্বামী পুরুষোত্তম প্রিয় দাসজি এবং মুরারি বাপুসহ শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা হার্দিক প্যাটেল ২০১১ সালে সর্দার প্যাটেল গোষ্ঠী তৈরি করেন এবং সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনে নামেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়। তাদের দাবি, সংরক্ষণ নেই বলে ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও ভালো কলেজে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় না প্যাটেল গোষ্ঠী।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার হার্দিক জিএমডিসি ময়দানের জনসভাতেই অনশন শুরু করেন। তারপরই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আর এতে ফল হয় বিপরীত। পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলে রাত থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ তীব্র সহিংস রূপ নেয়। পরিস্থিতির চাপে শেষে রাতেই পুলিশ হার্দিককে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বিক্ষুব্ধ লোকজন সরকারি সম্পত্তি তছনছ করে, সুরাটে শতাধিক সরকারি বাসে আগুন দেয়।
সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি ছাড়াও নিরাপত্তার খাতিরে রাজ্যের বেশির ভাগ অংশে কেবল টিভি, ইন্টারনেট যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়।