ভাসমান প্রেমে জটিলতা বাধল ডাঙায়

সাগরে ভাসমান অবস্থাতেই দুজনে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বিয়ের বন্ধনেও আবদ্ধ হন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডাঙার যত আইনি গেরো। লাল ফিতার জটে আটকে গেছে তাঁদের সংসারের স্বপ্ন। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ভারতীয় সুরেশ ও বেলজিয়ামের সারা।
সুরেশের বাড়ি ভারতের তামিলনাড়ুতে। আর সারা হলেন বেলজিয়ামের নাগরিক। হাজার মাইল দূরত্বকে কাছে আনে দুজনের কর্মস্থল। একই জাহাজে ক্যাটারিং সার্ভিসে কাজ করতেন দুজনে। সেই থেকেই পরিচয়, অতঃপর প্রেম। ভাসমান জীবনে সেই প্রেমকে পরিণতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেই মতোই সুরেশের হাত ধরে সারা চলে আসেন ভারতের তামিলনাড়ুতে।
তামিলনাড়ুর বিখ্যাত নমক্কল মন্দিরে লৌকিক মতে বিয়ে করতে যান সুরেশ ও সারা। কিন্তু বাদ সাধে ওই মন্দির কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়ে দেয়, হিন্দু তফসিলি উপজাতি পরিবারের ছেলে সুরেশের সঙ্গে কোনোমতেই বিয়ে হতে পারে না খ্রিস্টান সারার। শাস্ত্রমতে, এই বিয়ের কোনো বিধান নেই বলে দাবি করে তারা। নিরুপায় সুরেশ ও সারা স্থানীয় একটি অখ্যাত মন্দিরে দেবতাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেন। হিন্দুমতে, মাথায় ফুলের টোপর পরে বিয়ের আসরে বসে সুরেশের গলায় বরণমালা পরিয়ে দেন সারা। সুরেশ-সারার বিয়ের কথা জানতে বাকি নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে গোল বেধেছে অন্যখানে।
অখ্যাত মন্দিরে বিয়ে করায় সুরেশ ও সারার কোনো বৈধ অনুমোদন দেয়নি তামিলনাড়ুর মন্দির কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তাঁরা বিয়েকে রেজিস্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিপাক সেখানেও। অভারতীয় সারার ক্ষেত্রে বিয়ের রেজিস্ট্রি পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। অথচ বিয়ের কাগজপত্র পাওয়া না গেলে আগামীতে পদে পদে সমস্যা ঘটবে সুরেশ ও সারার। এদিকে, সুরেশকে ভালোবেসে ভারতে থাকবেন বলে সারা বেলজিয়ামে তাঁর নিজের রেস্তোরাঁটিও বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন। সারার পরিবার-পরিজনও বিয়ে শেষে ফিরে গেছে বেলজিয়ামে। এখন পাসপোর্টের দৌলতে সারা কত দিন সুরেশের কাছে থাকতে পারবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন।
ভারতে সুরেশ ও সারার সংসারের স্বপ্ন এখন যেন লাল ফিতার গেরোয় আটকা, যা খোলা দুঃসাধ্য। পাসপোর্টধারী বিদেশিনীকে বিয়ে করার বৈধতা পেতে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যাচ্ছে সুরেশের। আদৌ এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যাবে কি না, তা-ও জানে না কেউ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুরেশের সাফ সিদ্ধান্ত, ‘যদি সারাকে নিয়ে ফের জাহাজে ফিরে যেতে হয়, তা-ই যাবো। ভাসমান দাম্পত্যই কাটাব আমরা। তাই বলে ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে থাকতে পারব না।’