ওড়িষ্যা ট্রেন ট্রাজেডি : এখনও পরিচয় মেলেনি অর্ধশতাধিক মরদেহের
ভারতের ওড়িষ্যায় তিন ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার মাসখানেক সময় পেরিয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে অন্তত ২৯৩ জন। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। নিহতদের মধ্যে এখনও প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি এখনও। আজ বুধবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, গত ২ জুন সন্ধ্যায় ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওড়িষ্যায় দুটি যাত্রীবাহী ও একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে এই দুর্ঘটনা হয়।
ব্যাঙ্গালুরু থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ সময় সেখানে অন্য একটি রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে লাইনচ্যুত ট্রেনটির কয়েকটি বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তৃতীয় লাইনে পড়ে ট্রেনের আরও কয়েকটি বগি। সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি যাত্রীবাহী ট্রেন।
দুর্ঘটনার এক মাস পরে সবকিছু আগের মতো হয়ে গেছে। দুর্ঘটনার এলাকা দিয়ে ফের চলছে ট্রেন। তবে, এখনও অনেক পরিবার তাদের নিখোঁজ স্বজনদের হদিস পায়নি। এখনও প্রিয়জনের খোঁজ করছেন তারা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা শিব চরণ। দীর্ঘ এক মাস ধরে ওড়িষ্যার ভুবেনশ্বরের একটি গেস্ট হাউজে রয়েছে তিনি। এই গেস্ট হাউজের অবস্থান সরকারি হাসপাতালের খুব কাছে, যেখানে রাখা হয়েছে পরিচয় না মেলা মরদেহগুলো।
প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, মোট ৫২টি মরদেহ রয়েছে সরকারি হাসপাতালটিতে। সেখানকার ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়েছে মরদেহগুলো। এর মধ্যে অনেকগুলো মরদেহ পচে-গলে গেছে। এর ফলে নিহতের পরিবারগুলোর পক্ষে মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে গেছে।
প্রায়শ আশা নিয়ে হাসপাতালটিতে যান শিব চরণ। উদ্দেশ্য নিখোঁজ ভাই কৃষ্ণার খোঁজ পাওয়া। দুর্ঘটনার আগেও ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলা কৃষ্ণার খোঁজ এখনও মেলেনি। শিব চরণের প্রচেষ্টা অনবরতভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
শিব চরণ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আমার ভাইয়ের পোশাক শনাক্ত করতে পেরেছি। তবে, তার মরদেহ শনাক্ত করতে পারিনি। এখন শেষ ভরসা ডিএনএ টেস্ট। সেই টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় আছি।’
শিব চরণ বলেন, ‘কবে নাগাদ ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসবে তা আমি জানি না। কেউ সঠিকভাবে বলছেও না। তবে, আমি আমার ভাইকে ছাড়া এখান থেকে যাবো না। আমি তার শেষকৃত্য সঠিকভাবে করতে চাই।’
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন তিন সন্তানের বাবা আনজারুল হকও। পশ্চিমবঙ্গের এই বাসিন্দা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হন। মা ও সন্তানরা বেঁচে গেলেও খোঁজ নেই আনজারুলের। স্বামীর মরদেহ না পেয়ে প্রতিনিয়ত কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী।
নিখোঁজ আনজারুলকে খুঁজতে ভুবেনশ্বরে রয়েছেন তার ভাই ও বোন জামাই। প্রতিদিন হাসপাতালে যাচ্ছেন তারা। তারাও ডিএনএর নমুনা দিয়েছেন। তারাও অপেক্ষায় রয়েছে রিপোর্টের। আনজারুলের বোন জামাই মোহাম্মদ করিম বলেন, ‘এক মাস পেরুলেও আমরা এখন তার খোঁজ পাইনি।’
বিবিসি বলছে, গত সপ্তাহে ডিএনএ নমুনার ফলাফলের মাধ্যমে ২৯ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। মরদেহগুলো তাদের স্বজনদের কাছেও হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, এখনও ৫২ জনের পরিচয় মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহু বলেন, ‘ত্রুটি এড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রেলওয়ে কর্মকর্তা, পুলিশ ও ভুবেনশ্বর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের সহায়তায় নিহতদের শনাক্ত করছে তাদের স্বজনেরা।’
সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিহতদের শনাক্ত আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ভারতের কর্মকর্তারা। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, কতদিন মরদেহগুলো রাখা হবে। অনেকে বিকল্প হিসেবে গণদাহের কথা বলছে। বিশ্বজিত সাহু বলেন, ‘ডিএনএর সবগুলো ফলাফল না আসা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না।’